একথা স্মরণ রাখিতে হইবে যে, জাপানের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারের দায়িত্ব ১৮৭০ খৃঃ হইতে ১৮৮৩ খৃঃ পর্যন্ত মোটের উপর গবর্ণমেণ্টই গ্রহণ করিয়াছিলেন। এই সময়ে গবর্ণমেণ্টই জাপানের প্রধান কারখানাগুলির মালিক ছিলেন এবং তাঁহারাই ঐগুলি পরিচালনা করিতেন, কেন না আধুনিক ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা বিষয়ে জাপানের লোকেরা অনভিজ্ঞ ছিল। জনসাধারণকে শিল্প ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষিত করিবার জন্য গবর্ণমেণ্টকেই এই সব কারখানা স্থাপন করিয়া কাজ চালাইতে হইয়াছিল। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়—গবর্ণমেণ্টই রেলওয়ে, কয়লার খনি এবং অন্যান্য খনি, পোতশিল্পের কারখানা, বয়নশিল্পের কারখানা, সিল্কের কারখানা, তুলা, পশম প্রভৃতির বয়ন শিল্পের কারখানা, এবং কাচ ও কাগজের কারখানার মালিক ছিলেন।
“মেইজিদের সিংহাসন পুনঃ প্রাপ্তির পর তের বৎসর অর্থাৎ ১৮৬৮—১৮৯৩ এই সময়ের প্রথমার্ধে জাপানী শিল্পের শৈশবাবস্থায় গবর্ণমেণ্টই উহার পরিচালক ছিলেন। ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দের কোঠায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগগুলি ক্রমে গবর্ণমেণ্ট বেসরকারী পরিচালকদের হাতে দিতে থাকেন; ঐ সময় প্রধান প্রধান শিল্পগুলি সরকারী পরিচালনাধীনে তাঁহাদেরই সাহায্যে পুষ্ট ছিল। এইরূপে সরকারী পরিচালনার স্থলে বেসরকারী কর্তৃত্বের প্রথা প্রবর্তিত হইল। ১৮৯৪ খৃঃ অর্থাৎ চীন জাপান যুদ্ধের সময় পর্যন্ত শিল্প-বাণিজ্যে এই বেসরকারী কর্তৃত্ব ছিল। তারপরে ব্যাপক ভাবে দেশের শিল্পোন্নতির জন্য আয়োজন হইতে থাকে।” Uyehara: Industry and Trade of Japan.
“প্রায় সকল দেশের গবর্ণমেণ্টই বৃত্তি, সংরক্ষণ শুল্ক অথবা সরকারী ব্যাঙ্ক হইতে ঋণ সাহায্য দ্বারা শিল্পোন্নতিতে উৎসাহ দিবার চেষ্টা করিয়াছেন। প্রত্যেক দেশেই অবাধ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে, সরকারী বিধি ব্যবস্থা, শিল্প নির্মাতাদের পরস্পরের সহযোগিতা এবং সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রথা ক্রমশঃ প্রবর্তিত হইয়াছে। অবাধ বাণিজ্যের দিকে ঝোঁক থাকা সত্ত্বেও গ্রেট ব্রিটেন পর্যন্ত অবস্থার চাপে পড়িয়া, এই সব নূতন প্রথা কিয়ৎ পরিমাণে মানিয়া লইতে বাধ্য হইয়াছিল।”—Allen: Modern Japan and its Problems.
জাপানে প্রিন্স ইটো গবর্ণমেণ্টের পৃষ্ঠপোষকতায় বাধ্যতামূলক ভাবে শিল্পবাণিজ্যের উন্নতি সাধনে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন।
মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী এবং হেমেন্দ্রনাথ সেনের মৃত্যুতে বেঙ্গল পটারিজ লিমিটেডের বিশেষ ক্ষতি হইল। এই কোম্পানী যে প্রবল বিঘ্ন বিপদের মধ্যে অশেষ ক্ষতি স্বীকার করিয়াও, মাথা তুলিয়া থাকিতে পারিয়াছে, সে কেবল শ্রীযুত দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসাধারণ উদ্যম ও স্বার্থত্যাগের ফলে। সাত বৎসর পূর্বে তিনি কোম্পানীর অন্যতম ডিরেক্টর নির্বাচিত হন। সেই সময় হইতে তিনি কোম্পানীকে রক্ষা করিবার জন্য অক্লান্ত ভাবে সময় ও শক্তি ব্যয় করিয়াছেন। শ্রীযুত বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বড় অ্যাটর্নী কোম্পানীর অংশীদার, তাঁহার প্রত্যেক মিনিট ও ঘণ্টার মূল্য আছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও তিনি নিজের ব্যবসায়ের জন্য গুরুতর পরিশ্রম করিবার পরও প্রত্যহ দুই এক ঘণ্টা বেঙ্গল পটারিজ লিমিটেডের কাজ কর্ম দেখেন, ছুটীর দিন তিনি কোম্পানীর হিসাবপত্র প্রভৃতি ভালরূপে পরীক্ষা করেন। তিনি ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীর এম, এ, উপাধিধারী, কিন্তু তিনি মৃৎশিল্প সম্বন্ধে গ্রন্থাদি ভালরূপে অধ্যয়ন করিয়াছেন এবং বিশেষজ্ঞগণের সঙ্গে সর্বদা আলোচনা ও পরামর্শের ফলে ঐ শিল্পের ব্যবহারিক জ্ঞানও লাভ করিয়াছেন। আমি তাঁহাকে একাদিক্রমে ১২ ঘণ্টা কাজ করিতে দেখিয়াছি। কোম্পানীকে আর্থিক সঙ্কট হইতে রক্ষা করিবার জন্য ঋণ করিয়া নিজের সুনাম বিপন্ন করিতেও তিনি দ্বিধা করেন নাই।