ভাবে উল্লেখযোগ্য। এই পরিশ্রমের ফলে দেবেন্দ্রবাবুর স্বাস্থ্যভঙ্গ হইয়া গিয়াছিল বলিলেই হয়।
যাঁহারা বাংলা দেশে শিল্প ব্যবসায়ের সঙ্গে সংসৃষ্ট আছেন, তাঁহারাই এই কার্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করিতে পারিবেন। সিমলার সামরিক কনট্রাক্ট বিভাগের তদানীন্তন ডিরেক্টর কর্ণেল ডানলপ ১৯২৭ সালে এই কোম্পানীর কারখানা পরিদর্শন করেন এবং ভারতের পক্ষে এই নূতন শিল্পে নানা বাধাবিঘ্নের মধ্য দিয়া পাঁচ বৎসরে যে উন্নতি হইয়াছে, তাহার বিশেষ প্রশংসা করেন।
ভারতে প্রাপ্ত কাঁচা মাল লইয়া বহু পরীক্ষার পর এখানেই এনামেলের উজ্জ্বল রং করা সম্ভব হয়। কারখানাতে যে সব এনামেলের জিনিষ হইত, তাহা আমদানী ব্রিটিশ পণ্যের চেয়ে কোন অংশে নিকৃষ্ট ছিল না।
ইতিমধ্যে ধীরে ধীরে দক্ষ কারিগরের সংখ্যা বাড়িতে লাগিল, উৎপন্ন জিনিষের পরিমাণও বাড়িতে লাগিল। পূর্বে যেখানে একটি ছোট চুল্লী ছিল, সেস্থলে এখন কোম্পানীর চারটি বড় ‘মাফ্ল’ চুল্লী হইয়াছে। এনামেলের রং করিবার জন্যও অনেকগুলি ‘স্মেলটিং’ চুল্লী স্থাপিত হইয়াছে।
বাঙালী যুবকেরা যাহাতে এই এনামেল শিল্পের কাজ গ্রহণ করে এবং উহাতে লাগিয়া থাকে, সে চেষ্টায় বহু বেগ পাইতে হইয়াছে। চুল্লীতে যে প্রচণ্ড তাপের মধ্যে কাজ করিতে হয় তাহা মধ্যবিত্ত বাঙালী ভদ্র যুবকেরা সহ্য করিতে পারে না এবং এই জন্য বহু যুবক কাজ করিতে আসিয়া কিছুদিন পরেই চলিয়া যায়। অবশেষে নোয়াখালির কর্মঠ মুসলমান এবং পূর্ববঙ্গ হইতে তথাকথিত নিম্নবর্ণের হিন্দুদের কাজে লইতে হয়। উহাদের সঙ্গে উচ্চবর্ণীয় কয়েকজন ‘অশিক্ষিত’ হিন্দু যুবকও কাজ করিতে থাকে। শিক্ষিত বাঙালী যুবকরা এই শ্রেণীর পরিশ্রমের কাজ করিতে প্রবল অনিচ্ছা প্রকাশই করিয়াছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষিত যুবককে এনামেল শিল্পের কাজ শিখাইবার চেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইয়াছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সেই একই দুঃখের কাহিনী—বাঙালী যুবকদের শিথিল প্রকৃতি এবং কঠোর পরিশ্রমে অনিচ্ছা। এখনও পরিশ্রমী দৃঢ়চিত্ত বাঙালী যুবকদিগকে এই শিল্পে প্রবৃত্ত করাইবার জন্য চেষ্টা চলিতেছে—কেন না, অনেকেরই বিশ্বাস, এই চেষ্টার সাফল্যের উপরেই এদেশের এনামেল শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করিতেছে।
এখানে বলা যাইতে পারে যে, শিল্পপ্রধান ইংলণ্ডেও এনামেল শিল্পের সংরক্ষণ জন্য শতকরা ২৫% শুল্কের ব্যবস্থা আছে। এদেশে এই শিশু শিল্পেকে শক্তিশালী জার্মান ও জাপানী শিল্পের সঙ্গে প্রবল প্রতিযোগিতা করিতে হয় অথচ কোন প্রকার সরকারী বা ব্যাঙ্কের সাহায্যই সে পায় না।[১]
- ↑ ব্রিটিশ সরকারী বেতারবার্তার ৯ই জুন, ১৯২৯ তারিখের সংবাদে প্রকাশ:—“পার্লামেণ্টের কমন্সসভা গতকল্য এনামেল শিল্প সংরক্ষণের জন্য শতকরা ২৫% শুল্ক বসাইবার জন্য একটি প্রস্তাব গ্রহণ করিয়াছেন।”
বোর্ড অফ ট্রেডের প্রেসিডেণ্ট স্যার ফিলিপ কানলিফ লিস্টার বলেন যে, ১৯২২ সালে লয়েড জর্জের গবর্ণমেণ্ট প্রথম এই শুল্ক স্থাপন করেন। ১৯২৪ সালে এই শুল্কের মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলে দেখা গেল, বিদেশী পণ্যের আমদানী বাড়িয়াছে। কিন্তু ১৯২৬ সালে শিল্প সংরক্ষণ কমিটির বিবেচনার এই আমদানী বৃদ্ধির পরিমাণ পুনরায় শুল্ক বসাইবার পক্ষে যথেষ্ট বিবেচিত হইল না। কিন্তু—ঐ কমিটিই বর্তমানে শুল্ক বসাইবার দাবী গ্রাহ্য করিয়াছেন, কেননা তাঁহাদের সম্মুখে বিদেশী পণ্যের আমদানী সম্বন্ধে বহু নূতন তথ্য উপস্থিত করা হইয়াছিল। ইহা হইতে দেখা যায় যে এদেশের ১৮টি এনামেলের কারখানার মধ্যে ৬টিতেই লোকসান হইবার ফলে কাজ বন্ধ করিতে হইয়াছে।”