পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একবিংশ পরিচ্ছেদ
২৩৩

 অবশ্য, টাটার লোহার কারখানা বা টিটাগড় কাগজের কল প্রভৃতির মত বড় বড় ব্যবসায় সোরগোল করিয়া অতিরিক্ত সংরক্ষণ শুল্কের ব্যবস্থা করিয়া লইতে পারে; কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে বিদেশী প্রতিযোগিতার অত্যাচার নীরবে সহ্য করিয়া লুপ্ত হইতে হইবে। আমাদের ‘মা-বাপ’ সরকার এদেশের শিল্পোন্নতির জন্য কতদূর আগ্রহান্বিত ইহাই তাহার নিদর্শন।

(৩) বাংলায় বাণিজ্যপোত-অতীত ও বর্তমান

 অনেকেরই বিশ্বাস যে, বাঙালী বাণিজ্যপ্রচেষ্টা এবং সমুদ্রযাত্রার প্রতি স্বভাবতঃই বিমুখ। কিন্তু ঐতিহাসিক প্রমাণ হইতে দেখা যায় যে, এককালে বাঙালীরা দেশের অন্তবাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যে প্রধান অংশ গ্রহণ করিয়াছিল।

 “বাঙালীরা যে এককালে সমুদ্রযাত্রা এবং বাণিজ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল, তাহার প্রমাণ তাহাদের সাহিত্যে লিপিবদ্ধ আছে। চণ্ডীমঙ্গল ও মনসা-মঙ্গল সাহিত্য বাংলাদেশে সমধিক জনপ্রিয়। ঐ সব সাহিত্যে ধনপতি, শ্রীমন্ত, চাঁদ সদাগর প্রভৃতির বাণিজ্য ব্যপদেশে সমুদ্র-যাত্রার বিবরণ আছে।”[]

 ৩৯৯—৪১৪ খৃষ্টাব্দে চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়ান তাম্রলিপ্তকে বাংলার প্রধান সমুদ্রবন্দররূপে দেখিতে পান। ভারত ভ্রমণ করিয়া স্বদেশে ফিরিবার সময় তিনি এই তাম্রলিপ্ত বন্দর হইতেই জাহাজে যাত্রা করিয়াছিলেন। মিঃ ওকাকুরাও বলেন, মুসলমান- বিজয়ের সময় পর্যন্ত বাংলার উপকূলের সাহসী নাবিকগণ সিংহল, জাভা, সুমাত্রা প্রভৃতি স্থানে উপনিবেশ স্থাপন এবং চীন ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্বন্ধ গড়িয়া তুলিতেছিল। বাংলার ‘বারভুঁইঞা’দের সময়ে এবং ঢাকার মোগল রাজপ্রতিনিধিদের আমলে শ্রীপুর, বাকলা বা চন্দ্রদ্বীপ হিন্দুদের প্রধান নৌবন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। ঐ দুই স্থান বর্তমান বাখরগঞ্জ এবং চণ্ডীকানের (সাগরদ্বীপ) দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। শ্রীপুরের অধিপতি কেদার রায় নৌশক্তিতে খুব প্রবল ছিলেন এবং আরাকানের রাজা ১৫০ খানি রণতরীসহ যখন সন্দ্বীপ আক্রমণ করেন, তখন কেদার রায় নৌযুদ্ধে তাঁহাকে পরাস্ত করেন। রামচন্দ্র রায় এবং তাঁহার পুত্র কীর্তিনারায়ণের নেতৃত্বে বাকলা আর একটি প্রধান নৌকেন্দ্র হইয়া উঠে। কীর্তিনারায়ণ ফিরিঙ্গীদিগকে মেঘনা নদীর মোহনার সন্নিকটস্থ উপনিবেশ হইতে বিতাড়িত করিয়া ঐ স্থান দখল করেন। তৎকালে হিন্দুদের নৌশক্তির সর্বপ্রধান কেন্দ্র স্থাপিত হইয়াছিল চণ্ডীকানে। বিখ্যাত যশোরাধিপতি প্রতাপাদিত্য এবং তাঁহার পুত্র উদয়াদিত্য এই নৌকেন্দ্র স্থাপিত করেন।[]

 মুসলমান শাসকদেরও শক্তিশালী নৌবাহিনী ছিল। মিরজুমলা একটি বৃহৎ নৌবহর লইয়া আসাম অভিযান করেন। ১৬৬৪ সালে সায়েস্তা খাঁ বাংলার সুবেদার হন। তাঁহার রাজধানী ছিল ঢাকায়। মগদিগকে দমন করিবার জন্য তিনি একটি নৌবাহিনী গঠন


     একথা সত্য যে এনামেলের উপর শতকরা ১৫% আমদানী শুল্ক আছে। কিন্তু ইহাতে কোন ফল হয় না, কেননা এই শিল্প সংক্রান্ত যে সমস্ত রাসায়নিক দ্রব্য বিদেশ হইতে আমদানী করিতে হয়, তাহার উপরেও ঐ শুল্ক বসে। টাটার ইস্পাতের পাত এই শিল্পের একটি প্রধান উপকরণ। কিন্তু বিদেশ হইতে আমদানী ইস্পাতের পাতের চেয়ে টাটার ইস্পাতের মূল্য কম নয়।

  1. রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়: Indian Shipping.
  2. উদয়াদিত্য ও মোগল সেনাপতির মধ্যে নৌযুদ্ধের বিবরণ সতীশচন্দ্র মিত্র কৃত যশোর খুলনার ইতিহাসে দ্রষ্টব্য।