পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একবিংশ পরিচ্ছেদ
২৪১

বোট তৈরী করিতে বা মেরামত করিতে দেন (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত আদেশ ব্যতীত), তবে তাহা গবর্ণমেণ্ট বাজেয়াপ্ত করিতে পারিবেন।

 “যদি কোন সূত্রধর, কর্মকার বা অন্য কোন প্রকার শিল্পী এইরূপে বোট নির্মাণ বা মেরামত কার্যে নিযুক্ত থাকে (জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত), তবে তাহাকে একমাস পর্যন্ত ফৌজদারী জেলে অবরুদ্ধ করা হইবে অথবা ২০ ঘা পর্যন্ত বেত্রদণ্ড দেওয়া যাইতে পারিবে।

 “সপরিষৎ গবর্ণর জেনারেলের আদেশ অনুসারে।”

 এই সরকারী বিজ্ঞপ্তির অর্থ সুস্পষ্ট।

বশংবদ,
জনৈক পাঠক।”

 এইরূপ লোমহর্ষণ আদেশ বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি হয় না, কিন্তু ইহা ঐতিহাসিক সত্য। কোন সভ্য দেশের গবর্ণমেণ্টের ইতিহাসে এরূপ নিষ্ঠুর আদেশের তুলনা নাই।

 ইহার অর্থ সুম্পষ্ট। “যতদিন ব্রিটিশ শাসন ও ব্রিটিশ বণিকদের মধ্যে অসাধু স্বার্থের বন্ধন ছিন্ন না হইবে, যতদিন গবর্ণমেণ্টের নীতি পরিবর্তিত না হইবে এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ইঙ্গিতে তাঁহারা ভারতের অনিষ্টসাধন হইতে বিরত না হইবেন, ততদিন ভারতীয় বাণিজ্যপোত পুনর্গঠনের কোন আশা নাই।”—আবদুল বারি চৌধুরী।

 অবৈধ বিদেশী প্রতিযোগিতা এবং বিদেশী শাসকদের সহানভূতি-শূন্য ব্যবহার ব্যতীত আমাদের স্বদেশী শিল্পের বিফলতার আর একটি কারণ, নিজেদের মধ্যেই অনিষ্টকর প্রতিযোগিতা। আমি নিজের অভিজ্ঞতায় দেখিয়াছি যে, যখনই কোন স্বদেশী শিল্প প্রবর্তিত হয় এবং নানা বাধা বিঘ্নের সঙ্গে সংগ্রাম করিয়া বাঁচিতে চেষ্টা করে, তখনই আমাদের দেশের লোকেরা উহার অনুকরণ করিয়া দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে রাতারাতি ঐ শ্রেণীর বহু ব্যবসা ফাঁদিয়া বসে। ফলে পরস্পর জিনিষের দর কমাইয়া পাল্লা দিতে থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, বঙ্গীয় ষ্টীম ন্যাভিগেশান কোম্পানীকে বহু দেশীয় মোটর লঞ্চ এবং ষ্টীমারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করিতে হইয়াছে। ঐ সব মোটর লঞ্চ ও ষ্টীমার অন্য অনেক নদীতে ব্যবসা চালাইতে পারিত এবং তাহাতে লাভও হইত; কিন্তু তাহা তাহারা করে নাই। ফলে ঐ সব ব্যবসা ফেল পড়িয়া গিয়াছে এবং আমাদের কোম্পানীরও বহু লোকসান করিয়াছে। বাঙালীর প্রতি বিধাতার যেন চির অভিশাপ আছে, উপযুক্ত কর্মশক্তি, বুদ্ধি ও প্রেরণার অভাবে, তাহারা পুরাতন ছাড়িয়া নূতন কোন পথ অবলম্বন করিতে পারে না, এবং তাহার ফলে অনেক ক্ষেত্রে বাঙালীই বাংলার প্রধান শত্রু হইয়া দাঁড়ায়।