১৮২৮ সালে ‘সমাচার দর্পণে’ কোন সূতা কাটুনী স্ত্রীলোক নিম্নলিখিত পত্রখানি লিখিয়াছিলেন:—[১]
(৫ই জানুয়ারী ১৮২৮। ২২ পৌষ ১২৩৪)
চরকাকাটনির দরখাস্ত।—শ্রীযুত সমাচার পত্রকার মহাশয়।
আমি স্ত্রীলোক অনেক দুঃখ পাইয়া এক পত্র প্রস্তুত করিয়া পাঠাইতেছি আপনারা দয়া করিয়া আপনারদিগের আপন ২ সমাচারপত্রে প্রকাশ করিবেন শুনিয়াছি ইহা প্রকাশ হইলে দুঃখ নিবারণকর্তারদিগের কর্ণগোচর হইতে পারিবেক তাহা হইলে আমার মনস্কামনা সিদ্ধ হইবেক অতএব আপনারা আমার এই দরখাস্তপত্র দুঃখিনী স্ত্রীর লেখা জানিয়া হেয়জ্ঞান করিবেন না।
আমি নিতান্ত অভাগিনী আমার দুঃখের কথা তাবৎ লিখিত হইলে অনেক কথা লিখিতে হয় কিন্তু কিছু লিখি আমার যখন সাড়ে পাঁচ গণ্ডা বয়স তখন বিধবা হইয়াছি কেবল তিন কন্যা সন্তান হইয়াছিল। বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ী আর ঐ তিনটি কন্যা প্রতিপালনের কোন উপায় রাখিয়া স্বামী মরেন নাই তিনি নানা ব্যবসায়ে কালযাপন করিতেন আমার গায়ে যে অলঙ্কার ছিল তাহা বিক্রয় করিয়া তাঁহার শ্রাদ্ধ করিয়াছিলাম শেষে অন্নাভাবে কএক প্রাণী মারা পড়িবার প্রকরণ উপস্থিত হইল তখন বিধাতা আমাকে এমত বুদ্ধি দিলেন যে যাহাতে আমারদিগের প্রাণ রক্ষা হইতে পারে অর্থাৎ আসনা ও চরকায় সূতা কাটিতে আরম্ভ করিলাম প্রাতঃকালে গৃহকর্ম অর্থাৎ পাটি ঝাটি করিয়া চরকা লইয়া বসিতাম বেলা দুই প্রহর পর্যন্ত কাটনা কাটিতাম প্রায় এক তোলা সূতা কাটিয়া স্নানে যাইতাম স্নান করিয়া রন্ধন করিয়া শ্বশুর শাশুড়ী আর তিন কন্যাকে ভোজন করাইয়া পরে আমি কিছু খাইয়া সরু টেকো লইয়া আসনা সূতা কাটিতাম তাহাও প্রায় এক তোলা আন্দাজ কাটিয়া উঠিতাম এই প্রকারে সূতা কাটিয়া তাঁতিরা বাটিতে আসিয়া টাকায় তিন তোলার দরে চরকার সূতা আর দেড় তোলার দরে সরু আসনা সূতা লইয়া যাইত এবং যত টাকা আগামি চাহিতাম তৎক্ষণাৎ দিত ইহাতে আমারদিগের অন্ন বস্ত্রের কোন উদ্বেগ ছিল না পরে ক্রমে২ ঐ কর্মে বড়ই নিপুণ হইলাম কএক বৎসরের মধ্যে আমার হাতে সাত গণ্ডা টাকা হইল এক কন্যার বিবাহ দিলাম ঐ প্রকার তিন কন্যার বিবাহ দিলাম তাহাতে কুটম্বতার যে ধারা আছে তাহার কিছু অন্যথা হইল না রাঁড়ের মেয়্যা বলিয়া কেহ ঘৃণা করিতে পারে নাই কেননা ঘটক কুলীনকে যাহা দিতে হয় সকলি করিয়াছি তৎপরে শ্বশুরের কাল হইল তাঁহার শ্রাদ্ধে এগার গণ্ডা টাকা খরচ করি তাহা তাঁতিরা আমাকে কর্জ দিয়াছিল দেড় বৎসরের মধ্যে তাহা শোধ দিলাম কেবল চরকার প্রসাদাৎ এতপর্যন্ত হইয়াছিল এক্ষণে তিন বৎসরাবধি দুই শাশুড়ী বধূর অন্নাভাব হইয়াছে সূতা কিনিতে তাঁতি বাটীতে আসা দূরে থাকুক হাটে পাঠাইলে পূর্বাপেক্ষা সিকি দরেও লয় না ইহার কারণ কি কিছু বুঝিতে পারি না অনেক লোককে জিজ্ঞাসা করিয়াছি অনেকে কহে যে বিলাতি সূতার আমদানি হইতেছে সেই সকল সূতা তাঁতিরা কিনিয়া কাপড় বুনে। আমার মনে অহঙ্কার ছিল যে আমার যেমন সূতা এমন কখনও বিলাতি সূতা হইবেক না পরে বিলাতি সূতা আনাইয়া দেখিলাম আমার সূতাহইতে ভাল বটে তাহার দর শুনিলাম ৩।৪ টাকা করিয়া সের আমি
- ↑ দরিদ্র স্ত্রীলোকটি এই ধারণা হইতে পত্র লিখিয়াছিলেন যে, বিলাতী আমদানী সূতা তথাকার লোকের হাতে কাটা। তিনি স্বপ্নেও ভাবিতে পারেন নাই যে, ঐ সব সূতা বাষ্পশক্তি চালিত কলে তৈরী।