উপযোগী কাচ তৈরী করে। কাজেই প্রয়োজনাতিরিক্ত মাল হয়; তাহাকে কম মূল্যে অন্য দেশে চালান করিতে হইবে, অথবা কারখানার কাজ বন্ধ করিয়া দিতে হইবে। ল্যাঙ্কাশায়ার ও ইয়র্কশায়ারেরও এইরূপ দুর্দশা। প্রত্যেক দেশেই কারখানা স্থাপিত হইতেছে এবং যন্ত্র শক্তিতে উৎপন্ন দ্রব্যের পরিমাণ বহু গুণে বাড়িয়া গিয়াছে। কিন্তু তদনুপাতে জিনিষ বিক্রয় হইবার সম্ভাবনা নাই। জগতের জন সাধারণ অত্যন্ত দরিদ্রই রহিয়া গিয়াছে, সুতরাং উৎপন্ন মাল কাটিতেছে না। বিশেষতঃ এশিয়া ও আফ্রিকায় পাশ্চাত্যের তুলনায় আর্থিক উন্নতি কমই হইয়াছে, সুতরাং এই দুই মহাদেশে লোকসংখ্যা খুব বেশী হইলেও, সে তুলনায় পণ্য দ্রব্যাদি সামান্যই বিক্রয় হয়। সেখানকার লোক সমূহের অভাবও সামান্য।” আর একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে। হেন্রি ফোর্ডের কারখানা হইতে ১৯২০-২১ সনে ১২ ১/২ লক্ষ মোটর গাড়ী তৈরী হইয়াছে,[১] মাসে গড়ে ত্রিশ দিন কাজের সময় ধরিলে প্রত্যহ ৪ হাজার মোটর গাড়ী ফোর্ডের কারখানা হইতে তৈরী হইত। পরে হেন্রি ফোর্ড তাঁহার প্রতিবেশীদের পরাস্ত করিবার জন্য প্রত্যহ গড়ে ৬ হাজার মোটর গাড়ী তৈরী করিতে থাকেন। অন্যান্য কারখানার মালিকেরাও তাঁহার সঙ্গে উন্মত্তের মত পাল্লা দিতে থাকে। ফলে সঙ্কটজনক অবস্থার সৃষ্টি হইল। জগতবাসীরা কি ক্রমাগত মোটরগাড়ী কিনিতে পারে? বর্তমানে জগদ্ব্যাপী যে আর্থিক দুর্দশা হইয়াছে, তাহার একটা প্রধান কারণ এই অতি উৎপাদন।”
প্রায় দুই বৎসর পূর্বে উপরোক্ত কথাগুলি লিখিত হয়। পুস্তক মুদ্রণের পূর্বে স্থানীয় একখানি সংবাদপত্রে আমি নিম্নলিখিত মন্তব্য পাঠ করিলাম (১১-৩-৩২):—
“হেন্রি ফোর্ডের ব্যবসায়ের মূল নীতি এই যে, কলের দ্বারা কাজে শ্রমিক সংখ্যার হ্রাস হয় না, বরং তাহাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয় এবং তাহাদের মজুরীও বাড়ে। তিনি আরও বলেন যে, শ্রমিকদের যত বেশী মজুরী দেওয়া যায়, ততই ব্যবসায়ের উন্নতি হয়। কিন্তু গত দুই বৎসরের ঘটনাবলীর ফলে তাঁহার সেই মূল নীতি রক্ষা করা কঠিন হইয়াছে। আমরা শুনিতেছি যে, তাঁহার কৃষিক্ষেত্রে তিনি কল বর্জন করিয়া সনাতন প্রণালীতে কাজ করাইতেছেন, যাহাতে অধিক সংখ্যক লোক কাজ পাইতে পারে। বেশী মজুরী অতীতের কথা হইয়া দাঁড়াইয়াছে এবং তিনিও ঘটনাচক্রে বাধ্য হইয়া অন্য সকলের মত শ্রমিকদের মজুরী হ্রাস করিতেছেন।”
(২) কলের দ্বারা মানুষ কর্মচ্যুত হইয়াছে
জগতে আবার সঙ্গীন বেকার সমস্যা দেখা দিয়াছে। ইহা কতকটা নূতন ও অপ্রত্যাশিত রকমের। আর্থিক মন্দা, পণ্য উৎপাদন হ্রাস এবং কারখানা বন্ধ করার সঙ্গে ইহার সম্বন্ধ নাই। পক্ষান্তরে অতিরিক্ত পণ্য উৎপাদনের ফলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে। সম্প্রতি ইভান্স ক্লার্ক, ‘নিউইয়র্ক টাইমস্’ পত্রে এই কথাই লিখিয়াছেন। মিঃ ক্লার্ক বলেন, মানুষের কাজ এখন কলে করিতেছে, কাজেই অনেক লোক কাজ পাইতেছে না এবং তাহারই ফলে শ্রমিকদের বর্তমান দুর্দশা। তিনি বলেন, “আর্থিক কৃচ্ছতার সময়েই বেকার সমস্যা দেখা গিয়াছে। যখন ব্যবসা ভাল চলে না, তখনই কারখানা হইতে শ্রমিকদের ছাড়াইয়া দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যবসার অবস্থা ভাল হইলেই আবার লোক নিযুক্ত করা হয়।
- ↑ Henry Ford: My Life and Work.