“কিন্তু বর্তমানের বেকার সমস্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। আর্থিক মন্দার সময়ে যেরূপ হয়, ব্যবসায়ের বাজারে সেরূপ কোন অবনতির লক্ষণ দেখা যায় নাই। ‘ইউনাইটেড স্টেট্স্ ষ্টীল করপোরেশান’ এইমাসে গত বৎসরের তুলনায় বরং বেশী কাজ করিতেছে।
“বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার গত বৎসরের তুলনায় শতকরা ৭ ভাগ বাড়িয়া গিয়াছে।
“আরও একটি কারণ ভিতর হইতে প্রভাব বিস্তার করিতেছে। এতদিন ইহাকে আমরা লক্ষ্য করি নাই, কিন্তু এখন ক্রমে ক্রমে শক্তি সংগ্রহ করিয়া ইহা একটি প্রধান জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি করিয়াছে। যন্ত্র আমাদের শিল্প ক্ষেত্রের সর্বত্র যেরূপ দখল করিয়াছে তাহার ফলে মানুষ কর্মহীন বেকার হইয়া পড়িতেছে। এই দিক দিয়া চিন্তা করিলেই কেবল বর্তমান সমস্যার মূল আবিষ্কার করা যাইতে পারে।
“এতাবৎকাল পর্যন্ত যন্ত্র কার্যক্ষেত্রের বিস্তার করিয়া এবং আনুষঙ্গিক নানা শিল্পের সৃষ্টি করিয়া, মানুষকে কাজ যোগাইয়াছে। কিন্তু চিরদিনই এইরূপ সুখকর অবস্থা থাকিতে পারে না, বর্তমানের দুর্দশাই তাহার প্রমাণ।
“তিন দিক হইতে জিনিষটির বিচার করা যাইতে পারে। প্রথমতঃ, বর্তমানে কি বেকার সমস্যা সঙ্গীন হইয়া দাঁড়াইয়াছে? আমেরিকায় বহুসংখ্যক কল কারখানা বন্ধ হইয়া যাওয়ার ফলেই কি এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে? যদি পণ্য উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস না হইয়া থাকে, তবে ধরিয়া লইতে হইবে বর্তমান বেকার সমস্যার মূলে যন্ত্রের প্রভাব রহিয়াছে।
“তারপর পণ্য উৎপাদনের কথা। কারখানাতে পণ্য উৎপাদন হ্রাস হওয়াতেই কাজের পরিমাণ কমিয়া গিয়াছে, সাধারণতঃ এরূপ মনে করা যাইতে পারে। কিন্তু অবস্থা ইহার বিপরীত। ১৯২৭ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কল কারখানাগুলি এত অধিক পণ্য উৎপাদন করিয়াছে, গত বৎসর ব্যতীত আর কখনও এমন হয় নাই। একদিকে পণ্য উৎপাদন যেমন বাড়িয়াছে, অন্যদিকে তেমন ১৯১৯ সাল হইতে উৎপাদনকারী শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পাইয়া আসিতেছে।
“গৃহনির্মাণ শিল্পে এই শ্রমিক সংখ্যা হ্রাসের কৌশল বেশী পরিমাণে অগ্রসর হইয়াছে; পরিখা খনন, ভারী বস্তু উত্তোলন, বাতি-বহন প্রভৃতি অনেক কাজই এখন যন্ত্র-সাহায্যে হইতেছে। এই শিল্প সম্পূর্ণরূপেই যন্ত্রশিল্প হইয়া উঠিয়াছে।
“কয়লার খনির কাজেও যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়া গিয়াছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকায় শতকরা ৭১ ভাগ কয়লার কাজ কলের দ্বারা হইতেছে। ১৮৯০ সালে যে পরিমাণ শ্রমের প্রয়োজন হইত, বর্তমানে তাহা অপেক্ষা প্রায় অর্ধেক শ্রম খাটাইয়া কয়লার কোম্পানীগুলি এক বৎসরের উপযোগী কয়লা খনি হইতে তুলিতেছে। ইস্পাত কোম্পানীগুলি ১৯০৪ সালের তুলনায় বর্তমানে ঠিক সেই পরিমাণ শ্রমিক খাটাইয়া তিন গুণ বেশী পিণ্ডলৌহ তৈরী করিতেছে।
“হিসাব করিয়া দেখা গিয়াছে, আমেরিকার কৃষিফার্মসমূহে ৪৫ হাজার শস্য সংগ্রহ ও পেষণের যন্ত্র একলক্ষ ত্রিশ হাজার শ্রমিককে কর্মচ্যুত করিয়াছে। ইহারা উচ্চ হারে মজুরী পাইত।