গান্ধী ও ইংরাজ মনীষী) চরিত্র ও জীবন প্রণালী সম্পূর্ণ বিভিন্ন—তৎসত্ত্বেও তাঁহাদের আদর্শ এক—চিন্তায়, কার্যে ও লক্ষ্যে সব দিক দিয়া নিঃস্বার্থ পবিত্র জীবন। খৃষ্টধর্ম প্রবর্তক এইরূপ আদর্শই প্রচার করিয়াছিলেন।”
জাপানও পাশ্চাত্যদেশকে অনুকরণ করিতে আরম্ভ করিয়াছে, ফলে সে ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদী হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ফর্মোজা ও কোরিয়া তাহার কবলিত হইয়াছে, এখন মাঞ্চুরিয়ার উপর তাহার শ্যেনদৃষ্টি পড়িয়াছে। তবুও, জগদ্ব্যাপী আর্থিক দুর্দশা তাহাকেও আক্রমণ করিয়াছে এবং সেও ইহার প্রভাব মর্মে মর্মে উপলব্ধি করিতেছে।
‘ইংলিশম্যানের’ টোকিওস্থিত সংবাদদাতা ১৯৩১ সালের ৯ই অক্টোবর তারিখে লিখিয়াছেন,—
“৪০ বৎসর পূর্বে জাপান কাজের অভাব বোধ করিত না, অতীত কাল হইতে সেখানে এমনই একটি সুন্দর সরল সভ্যতা গড়িয়া উঠিয়াছিল। লোকে আলু খাইয়া সানন্দে জীবন যাপন করিত, ছুটীর দিনে কখন কখন ভাত খাইত, কিন্তু পাশ্চাত্য সভ্যতার যান্ত্রিক হাওয়ার সংস্পর্শে আসিয়া তাহারা ক্রমেই সেই প্রাচীন সভ্যতা হইতে দূরে সরিয়া যাইতেছে। এখন তাহারা কাজ করে, তাহাদিগকে কাজ করিতেই হইবে, অন্যথা না খাইয়া মরিতে হইবে। এমনই ঘটিয়া থাকে।”
এই অধ্যায় মুদ্রিত হইবার পূর্বে নরম্যান অ্যাঞ্জেল ও হ্যারল্ড রাইট কর্তৃক লিখিত “গবর্ণমেণ্ট কি বেকার সমস্যার প্রতিকার করিতে পারেন?” নামক গ্রন্থখানির প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। উক্ত গ্রন্থ হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত করিয়া আমি এই অধ্যায় শেষ করিব:—
“ভারমণ্টের কোন পার্বত্য অঞ্চলে গেলে দেখা যাইবে যে, একটি বৃহৎ কৃষিক্ষেত্র ও তৎসংশ্লিষ্ট বাড়ী ইমারত প্রভৃতি খালি পড়িয়া রহিয়াছে, মালিকেরা ঐ সব পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছে,—সামান্য কিছু বাকী খাজনা দিলেই উহা এখন পাওয়া যাইতে পারে। নিউ ইংলণ্ড ও কানাডার সমুদ্রোপকূলেও এইরূপ দৃশ্য চোখে পড়ে। কিন্তু এই কৃষিক্ষেত্র, বাড়ী ইমারত প্রভৃতির আয়েই পূর্বে একটি বৃহৎ পরিবারের সুখ স্বচ্ছন্দে চলিয়া যাইত। ঐ পরিবারে পিতামাতা, তেরটি সন্তান, দুইজন গরীব আত্মীয় ছিল। তাহারা কৃষিকার্যের জন্য যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করিত, তাহা আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির তুলনায় আদিম যুগের ছিল বলিলেই হয়। আমরা এখন বাষ্পীয় ও বৈদ্যুতিক শক্তি, হারভেষ্টর, ট্রাক্টর, সেপারেটর প্রভৃতি যন্ত্র ব্যবহার করি,—তাহারা ব্যবহার করিত মানুষের পেশী, বলদ, কাস্তে, কোদালি প্রভৃতি। তবু তাহারা ভাল খাদ্য খাইত, ভাল পোষাক পরিত, ভাল গৃহে আরামে থাকিত। তাহাদের কোন শারীরিক অভাব ছিল না। কৃষিক্ষেত্র সুদূর অঞ্চলে অবস্থিত, এবং এখনকার যানবাহনের কোন ব্যবস্থা না থাকিলেও, স্ব-সম্পূর্ণ ছিল।
“এই বিংশ শতাব্দীর লোকেদের উন্নততর যন্ত্রপাতি, প্রাকৃতিক শক্তির উপর অধিকতর অধিকার, এবং বহু গুণে অধিক উৎপাদিকা শক্তি থাকা সত্ত্বেও, জীবিকা অর্জন করিতে তাহারা সক্ষম নহে কেন? তাহাদের অন্য অনেক বিষয়ে বেশী সুবিধা থাকিতে পারে, কিন্তু আদিম যুগের যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারী ভারমণ্ট কৃষকদের তুলনায় এ ক্ষেত্রে তাহারা পশ্চাৎপদ।
“প্রকৃত ব্যাপার এই যে, এখন আর পণ্য উৎপাদক ও পণ্য ব্যবহারকারী এক ব্যক্তি নহে। পণ্য উৎপাদনকারী এখন জানে না বাজারে কি জিনিষ প্রয়োজন হয়, এবং কি জিনিষ প্রয়োজন হইবে। কি জিনিষের চাহিদা আছে, কি জিনিষ সরবরাহ করিতে হইবে, কি