পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ
২৯১

বিলাসিতার মধ্যে বাস করিত। সমসাময়িক ইংরাজী সাহিত্যে এই সব ‘নবাব’দের বিলাসব্যসনের প্রতি তাঁর শ্লেষ ও বিদ্রূপ আছে।

“Rich in the gems of India’s gaudy zone,
And plunder, piled from kingdoms not their own,

* * * *

Could stamp disgrace on man’s polluted name,
And barter, with their gold, eternal shame.”

 ১৭৫৭ খৃঃ হইতে ১৭৮০ খৃঃ পর্যন্ত ভারত হইতে যে ধন ইংলণ্ডে শোষিত হইয়াছিল তাহার পরিমাণ ৩ কোটী ৮০ লক্ষ পাউণ্ডের কম নহে। ইহাই ‘পলাশী শোষণ’ নামে পরিচিত। বাংলার লোকের পক্ষে এই ব্যয়ের বোঝা যে অত্যন্ত দুর্বহ ও কষ্টকর হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। টাকার শক্তি বর্তমানের চেয়ে তখন পাঁচ গুণ ছিল, সেই জন্য এখনকার চেয়ে সে যুগে ঐ শোষণের ফলে দুঃখ ও দুর্দশা আরও বেশী হইবার কথা।[]

 ১৭৬৬ খৃষ্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ পার্লামেণ্টারী কমিটীর সম্মুখে তাঁহার সাক্ষ্যে বলেন:—

 “মুর্শিদাবাদ সহর লণ্ডন সহরের মতই বিশাল, জনবহুল ও ঐশ্বর্যশালী। প্রভেদ এই যে, প্রথমোক্ত সহরে এমন সব প্রভূত ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তি আছেন, যাঁহাদের সঙ্গে লণ্ডনের কোন ধনী ব্যক্তির তুলনা হইতে পারে না।”

 কিন্তু ২৫ বৎসরের মধ্যেই ঐ মুর্শিদাবাদ সহরের অবস্থা ‘গজভুক্ত কপিত্থবৎ’ হইয়াছিল। ‘পলাশী শোষণের’ ফলে উহার সর্বত্র ধ্বংসের চিহ্ন পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছিল।

 ডিন ইন্‌জে তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ স্পষ্টবাদিতার সঙ্গে বলিয়াছেন:—

 “বাংলাদেশের ধনলুণ্ঠনের ফলেই প্রথম প্রেরণা আসিল। ক্লাইভের পলাশী বিজয়ের পর ৩০ বৎসর ধরিয়া বাংলা হইতে ইংলণ্ডে ঐশ্বর্ষের স্রোত বহিয়া আসিয়াছিল। অসদুপায়ে লব্ধ এই অর্থ ইংলণ্ডের শিল্প বাণিজ্য গঠনে শক্তি যোগাইয়াছিল। ১৮৭০ খৃষ্টাব্দের পরে ফ্রান্সের নিকট হইতে লুণ্ঠিত ‘পাঁচ মিলিয়ার্ড’ অর্থ জার্মানীর শিল্প বাণিজ্য গঠনে এই ভাবেই সহায়তা করিয়াছিল।”—Outspoken Essays, p. 91.

 ১৮৮৬ সালে উত্তর ব্রহ্ম বিজয়ের ফলও ঠিক এইরূপ হইয়াছিল। ২০ বৎসর পর্যন্ত এই দেশ তাহার শাসনব্যয় যোগাইতে পারিত না এবং অন্যান্য প্রদেশ হইতে সেজন্য অর্থ সংগ্রহ করিতে হইত। কিন্তু উত্তর ব্রহ্মবিজয়ের পূর্বেও দক্ষিণ বা নিম্ন ব্রহ্মও তাহার শাসনব্যয় যোগাইতে পারিত না। গোখেল বলেন যে, প্রায় ৪০ বৎসর ধরিয়া মহাদেশ ভারতের শ্বেতহস্তীরূপে ছিল এবং “ইহার ফলে বর্তমানে (২৭শে মার্চ, ১৯১১) ভারতের নিকট ব্রহ্মদেশের ঋণ প্রায় ৬২ কোটী টাকা।” কিন্তু এই বিপুল অর্থের প্রধান অংশই বাংলাকে বহন করিতে হইয়াছিল। ইহার কারণ কেবল লবণের উপর শুল্কবৃদ্ধি নয়, ভারত গবর্ণমেণ্টের রাজকোষে বাংলাই সবচেয়ে বেশী টাকা দেয়। এ কথাও স্মরণ


  1. Sinha Economic Annals.