বরিশালে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা কয়েকটি স্থানে সীমাবদ্ধ যথা, বানরীপাড়া, বাটাজোড়, গইলা, গাভা ইত্যাদি। ইহাদের মধ্যে অনেকেরই ভূসম্পত্তি কিছু নাই। তাহারা অধিকাংশই চাকরীজীবী। যদি তাহাদের শক্তি ও অধ্যবসায় থাকিত, তবে এই সুপারির ব্যবসায় হস্তগত করিতে পারিত এবং বৎসরে স্বীয় জেলার ১০।১৫ লক্ষ টাকা ঘরে রাখিতে পারিত। এই উপায়ে তাহাদের নিজেদের গ্রামেই বেশ সুখে স্বচ্ছন্দে থাকিতে পারিত, চাকুরীর জন্য বিদেশে গৃহহীন ভবঘুরের মত বেড়াইত না।
ভারতে বাহির হইতেও (সিঙ্গাপুর দিয়া) বৎসরে প্রায় ২১২ কোটী টাকার সুপারী আমদানী হয়। যদি কলেজে শিক্ষিত যুবকেরা বৈজ্ঞানিক কৃষির দ্বারা উন্নত প্রণালীতে সুপারির চাষ বাড়াইত, তাহা হইলে আরও কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জন করিতে পারিত। মিঃ জ্যাক ক্ষোভের সঙ্গে বলিয়াছেন,—“এই জেলার অধিবাসীদের ব্যবসায় বুদ্ধি অতি সামান্যই আছে।.......এই জেলার লোকদের আর্থিক দুর্গতির একটা প্রধান কারণ, উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা সদর মহকুমা প্রভৃতি স্থানে সংখ্যায় বেশী, সুতরাং চাকরী পাওয়া তাহাদের পক্ষে কঠিন এবং ইহার ফলে তাহাদের মধ্যে বেকার সমস্যা প্রবল। তাহারা এ পর্যন্ত কোন কর্মতৎপরতা দেখাইতে পারে নাই, অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য স্থাপন করিবার ক্ষমতাও তাহাদের নাই।”
সুপারির ব্যবসায়ের কথা বলিলাম। আর একটি শোচনীয় দৃষ্টান্ত দিতেছি। রংপুরের উত্তরাংশে (প্রধানতঃ নীলফামারী মহকুমায়) উৎকৃষ্ট তামাক হয়। বর্মাতে চুরুট তৈয়ারীর জন্য এই তামাকের চাহিদা খুব আছে। বাংলার ফসলের রিপোর্ট (১৯২৮-২৯) হইতে দেখা যায়, সাধারণতঃ ১,৩৮,২০০ একর জমিতে তামাকের চাষ হয়। ১৯২৪-২৯ এই পাঁচ বৎসরের উৎপন্নের উপর মণ প্রতি গড়ে ১৬।৵৹ দাম এবং প্রতি একরে ৬ মণ উৎপন্নের পরিমাণ ধরিয়া, উৎপন্ন তামাকের মোট মূল্য ১ কোটী ৩৬ লক্ষ টাকা দাঁড়ায়।[১] কিন্তু আক্ষেপের বিষয় এই যে, তামাকের বাজার সবই বর্মী ও বেম্বাইওয়ালা খোজাদের হাতে। [২] রংপুরের জমিদার ও উকীলেরা তাঁহাদের ছেলেদের কলিকাতায় কলেজে পড়িতে পাঠান
- ↑ ১৯২৮—২৯ সালে তামাকের ফসল খুব ভাল হইয়াছিল; প্রায় ১,৯০,০০০ একর জমিতে তামাকের চাষ হয়। প্রতি একরে ১২ ১/৪ মণ হিসাবে মোট ২৩,২৭,৫০০ মণ তামাক হয়। বাজার দর প্রায় ২০৲ টাকা মণ ছিল। স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে এই হার বেশী। সেই জন্যই ঐ বৎসর মোট উৎপন্ন তামাকের মূল্য প্রায় ৪ কোটী ৬৫ লক্ষ টাকায় দাঁড়াইয়াছিল, অর্থাৎ গত পাঁচ বৎসরের গড় হিসাবে অন্যান্য বৎসরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশী। পাটের ন্যার এই তামাকের চাষও বাজার চলতি দরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
- ↑ কলিকাতা হইতে বর্মায় যাহারা তামাক (কাঁচা) চালান দেয়, তাহাদের মধ্যে কয়েকজন প্রধান প্রধান ব্যবসায়ীর নাম:—
মেসার্স এইচ. থাই অ্যাণ্ড কোং, ২নং আমড়াতলা স্ট্রীট, কলিকাতা।
মেসার্স” এইচ. টি. এম. এইচ. তায়ুব অ্যাণ্ড কোং, ১২নং আমড়াতলা স্ট্রীট, কলিকাতা।
মেসার্স” এইচ. ই. এন. মহম্মদ অ্যাণ্ড কোং, ১৯নং জ্যাকেরিয়া স্ট্রীট, কলিকাতা।
মেসার্স” এন. জে. চাঁদ, ২৩নং আমড়াতলা স্ট্রীট, কলিকাতা।
মেসার্স” এ. ডি. ব্রাদার্স, ১৪৬নং লোয়ার চীৎপুর রোড, কলিকাতা।
“রংপুর জেলার কোতোয়ালী থানার কাবারু গ্রামের জমিরুদ্দীন নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে কমিটির সাক্ষাৎ হয়। জমিরুদ্দীন নিজে ১৮ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করে এবং তামাক ব্যবসায়ে সে একজন বড় রকমের দালাল। এই সব দালালের মারফত ব্যবসায়ীরা তামাক পাতা ক্রয় করে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ হইতে—প্রধানতঃ আকিয়াব, মৌলামিন ও রেঙ্গুন হইতে ব্যবসারীরা আসে। ঐ অঞ্চলে প্রায় ৫০০ দালাল আছে এবং জমিরুদ্দীন তাহাদের মধ্যে ক্ষুদ্র একজন দালাল। কিন্তু সে-ই বৎসরে প্রায় ৫০ হাজার টাকার তামাকের কারবার করে।— Report of the Bengal Provincial Banking Enquiry Committee.-1929-30.