রাখিয়াছে। বাঙালী কোথায়? প্রতিধ্বনি বলে—বাঙালী কোথায়?’ কবি কালিদাস বলিয়াছেন—
রেখামাত্রমপি ক্ষুণ্ণাদা মনোর্বর্ত্মনঃ পরম্।
ন ব্যতীয়ুঃ প্রজাস্তস্য নিয়ন্তুনের্মিবৃত্তয়ঃ॥
অর্থাৎ প্রচলিত পথ হইতে এক চুলও এদিক ওদিক যাইতে পারে না।
(৩) বাংলার ব্যবসায়ে অবাঙালী
কিন্তু দুই একটা দৃষ্টান্ত দিয়া লাভ কি? মাড়োয়ারী ও গুজরাটীরা সমস্ত ব্যবসা অধিকার করিয়া আছে। কোথায় টাকা উপার্জন করা যায়, সে সম্বন্ধে তাহার যেন একটা স্বাভাবিক বোধশক্তি আছে। যেখানেই সে যায়, সেইখানেই খুঁটী গাড়িয়া স্থায়ী ভাবে বসে এবং স্থানীয় তিলি, সাহা প্রভৃতি জাতীয় আবহমানকালের ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় পরাস্ত হয়।
আমি এই শোচনীয় অবস্থার অসংখ্য দৃষ্টান্ত দিতে পারি। উহা হইতে অকাট্যরূপে প্রমাণিত হইবে, বাঙালীরা নিজেদের কি শোচনীয় অবস্থার মধ্যে টানিয়া নামাইয়াছে।
বাঙালীরা বাংলার ব্যবসাক্ষেত্র হইতে ক্রমে ক্রমে বিতাড়িত হইতেছে। অ্যালুমিনিয়মের টিফিনের বাক্স, রান্নার পাত্র, বাটী, থালা প্রভৃতি বাঙালীর গৃহে আজকাল খুব বেশী ব্যবহার হইতেছে। কিন্তু এ সমস্তই ভাটিয়ারা তৈরী করে। ভারতের সর্বত্র এই অ্যালুমিনিয়ম বাসনের ব্যবসা তাহাদের একচেটিয়া। ইহার তৈরী করিবার প্রণালী অতি সহজ। বিদেশ হইতে পাৎলা অ্যালুমিনিয়মের পাত যন্ত্রযোগে পিটিয়া বিবিধ আকারে পাত্র তৈরী হয়। এম. এস-সি., ডিগ্রীধারী বাঙালী গ্রাজুয়েট যুবক অ্যালুমিনিয়মের দ্রব্যগুণ মুখস্থ বলিতে পারে, উহাদের রাসায়নিক প্রকৃতিও তাহারা জানে। কিন্তু ভাটিয়ারা এসব কিছুই করে না, তবু এই ধাতু হইতে নানা দ্রব্য তৈরী করিয়া তাহারা প্রভূত অর্থ উপার্জন করে।
খনিশিল্পেও বাঙালীদের স্থান অতি নগণ্য। এই শিল্পে ইয়োরোপীয়েরাই সর্বাগ্রগণ্য। ভারতবাসীদের মধ্যে মাড়োয়ারী এবং কচ্ছীরাই প্রধান। তাহারা ভূতত্ত্ব ও খনিজতত্ত্বের কিছু জানে না; তৎসত্ত্বেও তাহারাই সর্বদা খনি ব্যবসায়ের সুযোগ সন্ধান করে। তাহারা অনেক খনির ইজারা লইয়াছে এবং বহু কয়লা ও অভ্রখনির তাহারা মালিক। এই সব খনির কাজ তাহারা নিজেরাই পরিচালনা করে। খনিবিদ্যা, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভূতত্ত্বে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ উপাধি ধারী বাঙালী গ্রাজুয়েটরা ঐ সব ব্যবসায়ীদের অধীনে চাকরী পাইলে সৌভাগ্য জ্ঞান করে। লাক্ষা শিল্পেও বাঙালীর স্থান নাই। মাড়োয়ারীরা ইয়োরোপীয়দের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া এই ব্যবসায়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করিতেছে। কোদারমাতে (বিহার) অভ্রের বড় খনি আছে। অভ্রের ব্যবসায়ের প্রবর্তকদের মধ্যে কয়েকজন বাঙালীর নাম পাওয়া যায় বটে, কিন্তু বর্তমানে এই ব্যবসায় ইয়োরোপীয় ও মাড়োয়ারীদের একচেটিয়া। ১৯২৬ ও ১৯২৯ সালে ভারত হইতে যে অভ্র রপ্তানী হইয়াছে, তাহার মূল্য এক কোটী টাকারও বেশী। (Indian Mica—R. R. Chowdhury)
মোটর যানের ব্যবসা পাঞ্জাবীদেরই একচেটিয়া হইয়া দাঁড়াইতেছে। তাহারা বৈদ্যুতিক মিস্ত্রীর কাজও ভাল করে। প্লাম্বিং ব্যবসায়ে শ্রমশিল্পের কাজ উড়িয়ারাই করে। কলিকাতার জুতানির্মাতারা চীনা কিম্বা হিন্দুস্থানী চর্মকার। কলিকাতায় এবং মফঃস্বল সহরে, চাকর, রাঁধুনী বামুন প্রভৃতি হিন্দুস্থানী অথবা উড়িয়া। সমস্ত মজুর, রেলওয়ে কুলী এবং হুগলী ও অন্যান্য নদীতে নৌকার মাঝি, বিহারী কিবা হিন্দুস্থানী। ঢাকা,