পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১২
আত্মচরিত

 ৫। রামদুলাল দে সরকার—তিনি প্রথমে মদন মোহন দত্তের চাকরী করিতেন। তার পর মেসার্স ফেয়ারলি অ্যাণ্ড কোং ও আমেরিকাদেশীয় কাপ্তেনদের চাকরী করিয়া এবং নিজে ব্যবসা করিয়া প্রভূত ঐশ্বর্য সঞ্চয় করেন। তিনি সূতানটী সিমলায় থাকিতেন।[]

 ৬। গোবিনচাঁদ ধর—নীলমণি ধরের পুত্র, ব্যাঙ্কার। ইয়োরোপীয় জাহাজী কাপ্তেনদের কাজ করিয়া প্রভূত ধন সঞ্চয় করেন।

 এই তালিকায় লক্ষ্য করিবার বিষয় যে, মাত্র একজন অ-বাঙালী ধনীর নাম আছে।

 ইহা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, হুগলী নদীর তীরে প্রথম পাটের কল এবং আধুনিক যুগোপযোগী প্রথম ব্যাঙ্ক, প্রধান বাঙালী ধনীদের মূলধন ও সহযোগিতার দ্বারাই স্থাপিত হইয়াছিল। কিন্তু এখন সেই বাঙালীদের স্থান কোথাও নাই।

 “জর্জ অকল্যাণ্ড হুগলী নদীর তীরে প্রথম পাটের সূতা বোনার কল স্থাপন করেন। তিনি ১৮৫২—৫৩ সালে কলিকাতায় আসেন এবং বিশ্বম্ভর সেন নামক একজন দেশীয় বেনিয়ানের সঙ্গে তাঁহার পরিচয় হয়।......১৮৫৫ সালে রিশড়াতে প্রথম ভারতীয় পাটের সূতার কল প্রতিষ্ঠিত হয়। অকল্যাণ্ড তিন বৎসর কাল তাঁহার ভারতীয় অংশীদারের সহিত কারবার করেন।”—D. R. Wallace: The Romance of Jute, PP. 7 & 11.

 “১৮৬৩ সালে কলিকাতা ব্যাঙ্কিং করপোরেশান স্থাপিত হয়। ২রা মার্চ, ১৮৬৪ তারিখে উহার নূতন নাম করণ হয়—ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব ইণ্ডিয়া। কলিকাতাতেই প্রথমে ইহার প্রধান কার্যালয় ছিল, ১৮৬৬ সালে উহা লণ্ডনে স্থানান্তরিত হয়। ইহার ফলে ব্যাঙ্কের ভারতীয় বৈশিষ্ট্য লোপ পায়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, লণ্ডনে কার্যালয় স্থানান্তরিত করিবার সময়, ৭ জন ডিরেক্টরের মধ্যে ৪ জন ছিলেন ভারতীয়, যথা—বাবু দুর্গাচরণ লাহা, হীরালাল শীল, পতিতপাবন সেন এবং মানিকজী রস্তমজী। দুইজন অডিটারের একজন ছিলেন বাঙালী, তাঁহার নাম শ্যামাচরণ দে। ঐ সময়ে ব্যাঙ্কের প্রদত্ত মূলধন ৩১,৬১,২০০ টাকা হইতে বাড়িয়া ৪,৬৬,৫০০ পাউণ্ডে দাঁড়াইল,—সুতরাং অ-ভারতীয় অংশীদারদের প্রতিনিধি অধিক সংখ্যায় নির্বাচিত হইবার প্রয়োজন হইয়াছিল।” Report of Bengal Provincial Banking Enquiry Committee, 1929 ―30, vol. i., p. 45.

(৬) কেরাণীগিরি এবং বাঙালীর ব্যর্থতা

 এখন আমরা দেখিতেছি যে, বাঙালী সমস্ত ক্ষেত্র হইতে বিতাড়িত হইতেছে। তাহার জন্য কেবল গোটা কয়েক সামান্য বেতনের কেরাণীগিরি আছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও মাদ্রাজীরা আসিয়া আজ কাল ভাগ বসাইতেছে এবং শীঘ্রই তাহারা এ কাজ হইতেও বাঙালীদের বহিষ্কৃত করিবে। বলা যাইতে পারে যে, কেরাণীগিরি আমাদের অতীত জীবনের সঙ্গে


  1. অধিকাংশ বিদেশী ব্যবসায়ীরা কলিকাতাস্থিত ইয়োরোপীয় ফার্ম সমূহের এজেন্সি মারফৎ কারবার করিতেন। কিন্তু আমেরিকার ব্যবসায়ীরা ভারতীয় ব্যবসায়ী ও দালালদের মারফৎ কারবার করিতেন, কেন না ইঁহাদের কমিশন, দালালী প্রভৃতির হার কম ছিল। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে রামদুলাল দে-ই সর্বপ্রধান ছিলেন। এই বাঙালী ভদ্রলোক প্রথমে মাসিক ৪।৫ টাকা বেতনে কেরাণীর কাজ করিতেন, পরে নিজের ক্ষমতায় কলিকাতার একজন প্রধান ব্যবসায়ী হইয়াছিলেন। ১৮২৪ সালে প্রায় ৪ লক্ষ পাউণ্ড বা ৬০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রাখিয়া তিনি পরলোক গমন করেন। J. C. Sinha: Journal of the Asiatic Society of Bengal, N. S. 25, 1929, pp. 209-10.