ব্যবসায়ীরা কিরূপে বাজারে স্থান করিয়া লইয়াছে, তাহা আমরা ইতিপূর্বে দুই একবার বলিয়াছি। তাহাদিগকে স্থানচ্যুত করা কঠিন হইবে। যে কাজে বাঙালীদের প্রতিপত্তি ছিল, সেই কেরাণীগিরির কাজ হইতেও পার্শী ও মাদ্রাজীরা তাহাদের বে-দখল করিতেছে।
“সে দিন বেশীদূর নয়, যে দিন বাঙালী দালালের মত বাঙালী কেরাণীও বিরল হইবে। এই সহরের শ্রমশিল্পী ও যান্ত্রিকের কাজে শিখেরা বাঙালীদের স্থানচ্যুত করিতেছে। সাধারণ শ্রমিকের কাজ প্রায় সম্পূর্ণরূপেই উড়িয়া ও পূরবিয়াদের হস্তগত। ২০ বৎসর পূর্বে গৃহের ভৃত্য প্রভৃতির কাজ বাঙালী মুসলমানেরাই করিত। এখন গুর্খা ও পাঠানেরা সেই সব কাজ করিতেছে। কলিকাতার সমস্ত কাজ কর্ম ও ব্যবসার হিসাব লইলে, এই অবস্থাই দেখা যাইবে। বড় বড় ইমারত মাড়োয়ারীদের দখলে এবং ফটকে রাজপুতেরা পাহারা দিতেছে। কলিকাতা যে আন্তর্জাতিক বসতি স্থল হইয়া উঠিতেছে, ইহা তেমন ভাবে লক্ষ্য না করিলেও, বাঙালীরা যে এখান হইতে স্থানচ্যুত হইতেছে, এ কথা বাঙালীরা নিজেই বলিতেছে। বাঙালীরা “ধ্বংসোন্মুখ জাতি”—ইহা বাঙালীদেরই উক্তি।”
এস্থলে বলা যাইতে পারে যে, গত ৮ বৎসরে কলিকাতায় মাদ্রাজী ও পাঞ্জাবীদের আমদানী ক্রমশঃ বাড়িয়া চলিয়াছে।
(৭) বাঙালীর বিলোপ
এইরূপে বাঙালীরা জীবন সংগ্রামে অন্য প্রদেশের লোকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পারিয়া ক্রমেই ধ্বংস প্রাপ্ত হইতেছে। রাজনীতি ও অর্থনীতি ক্ষেত্রেও তাহারা হটিয়া যাইতেছে। সম্প্রতি ‘ম্যানচেষ্টার গার্ডিয়ান’-এর ভারতস্থিত সংবাদদাতা একটি প্রবন্ধে বাঙালীদের এই দুরবস্থা লইয়া আলোচনা করিয়াছেন। উক্ত পত্রের ভারতস্থিত সংবাদদাতা সাধারণতঃ যেরূপ বিচার বুদ্ধি ও সহানভূতির পরিচয় দিয়া থাকেন, এই প্রবন্ধেও তাহার অভাব নাই। এতদিন ধরিয়া যে সব কথা বলিতেছি, প্রবন্ধে সেই সমস্ত কথার সার সংগ্রহ করা হইয়াছে। প্রবন্ধটি মূল্যবান, কেননা ইহাতে বুঝা যাইবে, বিদেশীরা আমাদের কি দৃষ্টিতে দেখিয়া থাকে:—
“গত বৎসরের ভারতের রাজনীতি ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করিলে দেখা যাইবে বাঙালীরা সেখানে লোপ পাইতে বসিয়াছে।
“কলিকাতা হইতে ভারতের রাজধানী স্থানান্তরিত হইবার কয়েক বৎসর পরেও বাঙালীরা ভারতের চিন্তানায়ক ছিল। পশ্চিম ভারতে জি. কে. গোখলে এবং বাল গঙ্গাধর তিলকের মত লোক জন্মিয়াছিল বটে, কিন্তু সাহিত্য, বিজ্ঞান, এবং রাজনীতিতে বাঙালীরা এ দাবী অবশ্যই করিতে পারিত যে, তাহারা আজ যাহা চিন্তা করে, সমগ্র ভারত পর দিন তাহাই চিন্তা করিবে। কিন্তু বাঙালীরা এখন সচেতন হইয়া দেখিতেছে যে, তাহাদের নেতারা বৃদ্ধ, তাঁহাদের স্থান অন্য কেহ গ্রহণ করিতে পারিতেছে না; এবং দিল্লীর ব্যবস্থা পরিষদে অথবা কংগ্রেসে বাঙালী প্রতিনিধিদের প্রভাব খুবই কম।—রাজনৈতিক ভারকেন্দ্র বাংলা হইতে উত্তর ও পশ্চিমে সরিয়া যাইতেছে।
পশ্চিম ভারতের প্রাধান্য
“পশ্চিম ভারতের ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য ভারতীয় রাজনীতিতে একটা নূতন জিনিষ। চিতপাবন ব্রাহ্মণেরা পূর্বে এই অঞ্চলের সমস্ত রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রাধান্য করিত। গোঁড়া ব্রাহ্মণ তিলকের মৃত্যুর পর ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করিতে আরম্ভ