গৃহে জন্মগ্রহণ করে না, তাহাদের জন্য করুণা প্রকাশ করাও হয়। কিন্তু এ বিষয়ে প্রেসিডেণ্ট গারফিল্ডের উক্তি আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি—‘যুবকের পক্ষে সর্বাপেক্ষা বড় পৈতৃক সম্পত্তি দারিদ্র্য।’ আমি ভবিষ্যদ্বাণী করিতেছি যে, এই দরিদ্রদের মধ্য হইতেই মহৎ এবং সাধু ব্যক্তিরা জন্মগ্রহণ করিবেন। আমার এ ভবিষ্যদ্বাণী অর্থশূন্য অতিরঞ্জন নহে। কোটীপতি বা অভিজাতদের বংশ হইতে পৃথিবীর লোকশিক্ষক, ত্যাগী, ধর্মাত্মা, বৈজ্ঞানিক, আবিষ্কারক, রাজনীতিক, কবি বা ব্যবসায়ীরা জন্মগ্রহণ করেন নাই। দরিদ্রের কুটীর হইতেই ইঁহারা আসিয়াছেন।...... সকলেই বলিবেন যে, যুবকের প্রথম কর্তব্য আত্মনির্ভরশীল হইবার জন্য নিজেকে শিক্ষিত করিয়া তোলা।”—The Empire of Business.
(৯) বোম্বাই কি ভাবে বাংলার অর্থ শোষণ করিতেছে
বাংলার বাজারে বোম্বাই মিলের কার্পাস বস্ত্রজাত কি পরিমাণে চলিতেছে, তাহার সঠিক হিসাব দেওয়া কঠিন। যতদূরে হিসাব সংগ্রহ করিতে পারিয়াছি, তাহাতে মনে হয়, কলিকাতা বন্দরে বাহির হইতে প্রায় ১২৫.২ কোটী গজ কাপড় আমদানী হয়, আর স্থানীয় উৎপন্ন বস্ত্রজাতের পরিমাণ মাত্র ১৩.৪ কোটী গজ। কলিকাতা বন্দরে যে কাপড় আমদানী হয় তাহা সমস্ত বাংলা, বিহার, আসাম এবং যুক্ত প্রদেশেরও কতকাংশে যায়। ইহা লক্ষ্য করিবার বিষয় যে, কলিকাতা বন্দরে আমদানী স্বদেশী মিলের কাপড় বাংলাদেশেই বেশী বিক্রয় হয়। অন্যান্য স্থানে, বিশেষতঃ বিহারে হাতে বোনা কাপড় (খদ্দর) বেশী চলে। বিশেষ সতর্কতার সহিত হিসাব করিয়া আমরা দেখিয়াছি যে, ১৯২৭-২৮ সালে যে ১২৫.২ কোটী গজ কাপড় কলিকাতা বন্দরে আমদানী হইয়াছিল (মিঃ হার্ডির হিসাবে), তাহার মধ্যে ১০০ কোটী গজ কাপড়ই বাংলাদেশে বিক্রয় হইয়াছিল। এই সম্পর্কে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশে অন্যান্য প্রদেশ অপেক্ষা জীবন যাত্রার আদর্শ উচ্চতর, কেন না এখানে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বেশী। বাংলাদেশে বিক্রীত এই ১০০ কোটী গজ কাপড়ের মূল্য ১০ কোটী টাকা ধরা যাইতে পারে। সরকারী বিবরণে দেখা যায় যে, ১৯২১ সালে বাংলাদেশে যে ভারতীয় বস্ত্রজাত আমদানী হয়, তাহার মূল্য ৬ কোটী টাকা হইবে। ইহার সঙ্গে পূর্বোক্ত হিসাবের সামঞ্জস্য আছে বলা যাইতে পারে। কেন না ১৯২১ সাল হইতে স্বদেশী আন্দোলনের প্রসারের ফলে ভারতীয় মিলের বস্ত্রজাত ক্রমেই বেশী পরিমাণে বিদেশী বস্ত্রজাতের স্থান অধিকার করিতেছে।[১]
‘ক্যাপিট্যাল’ (১০ই ডিসেম্বর, ১৯৩১) পত্রে এই সম্পর্কে কয়েকটি সুচিন্তিত মন্তব্য প্রকাশিত হইয়াছে:—
“কার্পাস শিল্প সম্বন্ধে এই বলা যায় যে, আরও ১৫০।২০০ মিল তৈরী করিলে ভারতের চাহিদা মিটিবে। সুতরাং বাংলা যদি তাহার নিজের কাপড়ের চাহিদা নিজে মিটাইতে চায়, তাহা হইলে তাহাকে বিশেষরূপে উদ্যোগী হইতে হইবে। অন্যথা তাহাকে চিরকাল বোম্বাইয়ের তাঁবেদারীতে থাকিতে হইবে, কেন না এখন যে সব কাপড়ের কল
- ↑ ইণ্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারী মিঃ এম. পি. গান্ধী একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। তাঁহার Indian Cotton Textile Industry গ্রন্থে তিনি হিসাব করিয়া দেখাইয়াছেন যে, প্রতি বৎসর প্রায় ১৫ কোটী টাকা মূল্যের বস্ত্রজাত বাহির হইতে বাংলার আমদানী হয়। আমি কম পক্ষে ১০ কোটী টাকা ধরিয়াছি।
অবশ্য বোম্বাই যে কাপড় যোগায়, তাহার মূল্য হইতে কাঁচা তূলার মূল্য বাদ দিতে হইবে, কেন না বাংলাতে তূলা উৎপন্ন হয় না।