পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ
৩২৭

লাইফ ফাণ্ড

১৯২৯
বোম্বাইয়ের কোম্পানী টাকা ১৪,৭৩,২৭,০০০
বাংলার কোম্পানী টাকা ২,৭০,২২,০০০[]
মাদ্রাজের কোম্পানী টাকা ৪৬,২৩,,০০০
পাঞ্জাবের কোম্পানী টাকা ১,২৮,৬৬,০০০
যুক্তপ্রদেশ, আজমীর ও দিল্লীর কোম্পানী টাকা ২৪,০৯,০০০

 দেখা যাইতেছে, যে, খাঁটি বাঙালী কোম্পানী গুলির প্রিমিয়ামের আয় ৩৫ লক্ষ টাকা এবং লাইফ ফাণ্ড ১/ কোটী টাকা মাত্র। ইনভেষ্টরস্ রিভিউয়ের নব প্রকাশিত সংখ্যায় দেখা যাইবে, ইনসিওরেন্স কোম্পানী গুলি কিরূপে কারবার চালায় এবং লাভ করে। ইনসিওরেন্স কোম্পানী গুলির হাতে প্রভূত মলধন থাকে এবং এই টাকার অধিকাংশ ইংলণ্ড ও আমেরিকার রেলওয়ে, ইলেকট্রিক কোম্পানী, গ্যাস কোম্পানী, লোহা ও ইস্পাত কোম্পানী, কয়লার ব্যবসায়, জাহাজের ব্যবসায় এবং টেলিগ্রাফ কোম্পানী সমূহের কারবারে খাটান হয়। গ্রেট ব্রিটেনে বহু জাতিগঠনমূলক কার্যে ইনসিওরেন্স কোম্পানীর ফাণ্ডের টাকা এই ভাবে খাটান হইয়া থাকে। ইহা একটি লাভজনক পন্থা এবং তাহারা এই ভাবে তাহাদের শিল্প সম্ভার বাড়াইয়াছে, শিল্প বাণিজ্য, অর্থনীতি ব্যাপারে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করিয়াছে। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে ইনসিওরেন্স ফাণ্ডের শতকরা ৩৫ ভাগ রেলওয়েতে, ৩০ ভাগ স্থাবর সম্পত্তিতে এবং ৯ ভাগ মাত্র গবর্ণমেণ্ট সিকিউরিটিতে খাটানো হইয়া থাকে। পূর্বেই বলিয়াছি যে, বোম্বাইয়ের তথা বিদেশী কোম্পানীগুলির অধিকাংশ প্রিমিয়াম ও ফাণ্ডের টাকা বাংলা হইতেই প্রাপ্ত এবং ঐ টাকা তাহারা নিজেদের শিল্প বাণিজ্যের উন্নতির জন্য নিয়োগ করিয়া থাকে। এই সমস্ত ব্যাপারে বাংলার প্রায় ২৷৩ কোটী টাকা শোষিত হয় এবং ইহা আমাদের আর্থিক স্বাতন্ত্র্যের পক্ষে প্রবল অন্তরায়।

 নিম্নোদ্ধৃত পত্রখানিতে অনেক চিন্তা করিবার কথা আছে। লেখক আমার সপরিচিত এবং তিনি বাংলার শোচনীয় অবস্থা উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন:—

প্রাদেশিক পক্ষপাত

 ক্যাপিট্যালের সম্পাদক মহাশয় সমীপেষু,

১০ই ডিসেম্বর, ১৯৩১

মহাশয়,

 ১৯৩১ সালের ৩রা ডিসেম্বরের “ডিচার্স ডায়েরীতে” স্যার পি. সি. রায় প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রকাশিত “স্বরাজ এবং বাংলার আর্থিক অবস্থা” শীর্ষক পুস্তিকার বিস্তৃত সমালোচনা করা হইয়াছে। আপনার যুক্তিপূর্ণ সমালোচনায় কিন্তু দেখান হয় নাই, বাংলা কিরূপে আর্থিক ধ্বংস হইতে মুক্তি লাভ করিতে পারিবে। প্রাদেশিক পক্ষপাত যতদূর সম্ভব বর্জন করিতে হইবে, এবং উহা আমাদের নিকট রুচিকরও নহে। কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করি, ইহা ছাড়া আর কি পথ আছে?


  1. ইহার মধ্যে “ন্যাশনালের” দরুণ ১/ কোটী টাকা। সুতরাং খাঁটী বাঙালী কোম্পানীর ফাণ্ডের পরিমাণ ১/ কোটী টাকা মাত্র।