যাইতেছে। কোচিন, আন্দামান দ্বীপ প্রভৃতি স্থান হইতে প্রায় সওয়া কোটী টাকার নারিকেল তৈল আমদানী হয়। এই নারিকেল তৈলের ব্যবসা গুজরাটী কচ্ছী এবং মেমনদের হাতে।”
শ্রীযুত মখোপাধ্যায় আরও লিখিয়াছেন:—
“স্কুল কলেজ ব্যবসাশিক্ষার স্থান নহে। ঐ সব স্থানে অর্থনীতি, হিসাব রাখা ইত্যাদির মূলসূত্রগুলিই কেবল শেখা যাইতে পারে। জগতের সর্বত্র নিম্ন স্তর হইতেই ব্যবসা আরম্ভ করিতে হয় এবং নানা রূপ বাধা বিপত্তি ও নৈরাশ্যের মধ্য দিয়া অগ্রসর হইতে হয়। কিন্তু বাঙালীরা অলস ও আয়েসী। তাহারা কোন রূপে কষ্ট করিতে বা ঝুঁকি লইতে অনিচ্ছুক; ফলে অবাঙালীরা তাহাদিগকে সমগ্র কর্মক্ষেত্র হইতে বিতাড়িত করিতেছে।
“বাঙালী জাতি যেন পক্ষঘাতগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছে। কয়েক বৎসর হইল আলুর ব্যবসায়ের খুব প্রসার হইয়াছে। শিলং, দার্জিলিং ও নৈনিতাল হইতে প্রচুর আলু আমদানী হয়, কিন্তু বাঙালী কোন ব্যবসাই বড় আকারে করিতে পারে না। সতরাং আলু আমদানীর ব্যবসা যে মাড়োয়ারী ও হিন্দুস্থানীদের হাতে পড়িবে, ইহা বিচিত্র নহে।”
মধ্যবিত্ত বাঙালী ভদ্রলোকদের মধ্যে বেকার সমস্যা
শ্রীযযুত রাজশেখর বসু একজন কৃতী বাঙালী। গত পচিশ বৎসর তাঁহারই পরিচালনাধীনে থাকিয়া বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যাণ্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস প্রভূত উন্নতি লাভ করিয়াছে। আমার অনুরোধে রাজশেখর বাবু মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকদের মধ্যে বেকার সমস্যার কারণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে নিম্নলিখিত অভিমত জ্ঞাপন করিয়াছেন:—
মধ্যবিত্ত বাঙালী—প্রাচীন ও নবীন
“একশত বৎসর পূর্বে বাংলার কয়েকটি উচ্চ জাতিই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। উহাদের জীবিকা প্রায় বর্তমানের মতই ছিল, যথা—জমিদারী, চাষবাস, জমিদারের চাকরী, কৃষি ও মহাজনী। বহু ব্রাহ্মণ পণ্ডিতী ও পুরোহিতগিরি করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিত। বৈদ্যেরা জাত ব্যবসা হিসাবে কবিরাজী করিত। অল্পসংখ্যক লোক সরকারী অথবা ইয়োরোপীয় সওদাগরদের অফিসে কাজ করিত। ব্যবসা বাণিজ্য সাধারণতঃ নিম্নজাতীয় লোকদের হাতেই ছিল। শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের প্রতি ভদ্রলোকদের একটা অবজ্ঞার ভাব ছিল এবং সমাজিক সঙ্কীর্ণতা বশতঃ ভদ্রলোকেরা তাহাদের প্রতিবেশী ব্যবসায়ীদের কোন খবর রাখিত না। সাধারণ মধ্যবিৎ বাঙালীদের অবস্থা এখনকার চেয়ে ভাল ছিল না। কিন্তু সে তাহার অবস্থায় সন্তুষ্ট ছিল, কেন না তাহার জীবন যাপন প্রণালী সরল ছিল, অভাবও এত বেশী ছিল না।
“নূতন শিক্ষাব্যবস্থার আমদানী হওয়াতে, মধ্যবিৎ বাঙালীদের উপার্জনের ক্ষমতা বাড়িয়া গেল। সে এই নূতন ক্ষেত্রে অগ্রদূত, এবং অন্যান্য প্রদেশেও তাহার কাজের খুব চাহিদা হইতে লাগিল। তাহার নবলব্ধ ঐশ্বর্য এবং সহুরে জীবনের অভিজ্ঞতার ফলে, তাহার জীবিকার আদর্শের পরিবর্তন হইল। তাহার প্রতিবাসীরা এই পরিবর্তন লক্ষ্য করিল এবং তাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিতে লাগিল! ‘নিম্নজাতীয়’ লোকেরাও শীঘ্রই আকৃষ্ট হইল এবং নিজেদের পৈতৃক ব্যবসা ত্যাগ করিয়া দলে দলে চাকরীর অন্বেষণে ধাবিত হইল। বর্তমানে যে কেহ ইংরাজী শিখে এবং ভদ্রলোকদের আচার ব্যবহার অনুসরণ করে, সেইই মধ্যবিৎ সম্প্রদায়ভুক্ত বলিয়া গণ্য হয়।