স্বরূপে হইয়াছে। সহস্র প্রকারে ইহা সমাজের অনিষ্ট করিতেছে। জাপানেও তাহার নবজাগরণের পূর্বে ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প- প্রাচীন প্রথায় সমাজের নিম্ন স্তরের লোকেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যাহারা ব্যবসা বাণিজ্য করিয়া অর্থোপার্জন করিত, সামুরাইয়েরা তাহাদের সঙ্গে সমান ভাবে মেলামেশা করিতে ঘৃণা বোধ করিত। কিন্তু জাপান যেন যাদুমন্ত্র বলে তাহার সামাজিক বৈষম্য বিলপ্ত করিয়া দিয়াছে, তাহার অভিজাত শ্রেণীর নানা ভাবেও সম্পূর্ণ পরিবর্তন হইয়াছে,—আর ভারত সেই পূর্বাবস্থাতেই অচল হইয়া আছে। ইহা যে তাহাকে ধ্বংসের পথে লইয়া যাইতেছে, তাহা ভাবিয়া দেখিবার সময় তাহার নাই।
(২) সমুদ্র যাত্রা নিষিদ্ধ—হিন্দু ভারতের উপর তাহার অনিষ্টকর
প্রভাব—আর্থিক উন্নতি এবং রাজনৈতিক বোধের উন্মেষ
পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায়, সমুদ্র যাত্রা ও তাহার আনুষঙ্গিক সমুদ্র বাণিজ্য প্রভৃতি কেবল জাতির ঐশ্বর্য বৃদ্ধি করে নাই, তাহার মধ্যে রাজনৈতিক বোধও জাগ্রত করিয়াছে। প্রাচীন ফিনিসিয়া ও কার্থেজকে ইহার দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ করা যাইতে পারে। মধ্য যুগের ভিনিস ও ফ্লোরেন্সের সাধারণ তন্ত্রেও তাহার পরিচয় পাওয়া যায়। এই সব সহরের বন্দরে পৃথিবীর বিভিন্ন কেন্দ্র হইতে পণ্য দ্রব্য আসিয়া জমা হইত। উহা তাহাদের গর্ব এবং প্রতিবাসীদের ঈর্ষার বিষয় ছিল।
“আমার প্রচেষ্টা কেবল এক বিষয়ে বা এক স্থানে নিবন্ধ নহে। কেবল বর্তমান বৎসরের আয়ই আমার সমস্ত সম্পত্তি নহে।” মার্চেণ্ট অব ভিনিস (সেক্সপীয়র)।
পুনশ্চ—“তাহার একখানি জাহাজ ট্রিপলিসে, আর এক খানি ইণ্ডিসে যাইতেছে। আমি রিয়ালটোতে জানিতে পারিলাম যে, তাহার তৃতীয় আর একখানি জাহাজ মেক্সিকোতে ও চতুর্থ জাহাজ ইংলণ্ডে যাইতেছে। তাহার একটি অভিযান বিদেশে ব্যর্থ হইয়া গিয়াছে।”— মার্চেণ্ট অব ভিনিস।
রিয়ালটো জীবনের চাঞ্চল্যে পূর্ণ ছিল। মেডিচির সময়ে ফ্লোরেন্স তাহার গৌরবের উচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়াছিল।[১] ঐ স্থানে প্রসিদ্ধ শিল্পী, কবি, কূট রাজনীতিক এবং যোদ্ধাদের সমাগম হইত।
বাটেভিয়া সাধারণ তন্ত্রের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করিতেছি। বাটোভিয়া ক্ষুদ্র দেশ, সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস হইতে রক্ষা করিবার জন্য ইহার এক অংশে বাঁধ নির্মিত। কিন্তু এই ক্ষুদ্র
- ↑ “ভিনিসের রাস্তা ও জলপথ যখন জীবনের স্রোতে পূর্ণ হইত, রিয়ালটো যখন বাণিজ্য সম্ভারে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিত, তখন ভিনিস সহরকে কিরূপ দেখাইত, বর্তমানে তাহা কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু ফ্রেট ফেবার, পিয়েট্রো, কাসোলা এবং সর্বোপরি—ফ্রান্সিসকো পেট্রাকের বর্ণনা হইতে আমরা সেই ঐশ্বর্য ও গৌরবের কিছু পরিচয় পাই। পেট্রার্ক সোচ্ছ্বাসে বলিয়াছেন—‘নদীর উপরে আমার গৃহের বাতায়ন হইতে আমি জাহাজগুলিকে দেখিতে পাই, আমার গৃহের চূড়া হইতে জাহাজের মাস্তুলগুলি উচ্চ। তাহারা জগতের সর্বত্র যায় এবং সর্বপ্রকার বিপদের সম্মুখীন হয়। তাহারা ইংলণ্ডে মদ্য লইয়া যায়, সিথিয়ানদের দেশে মধু বহন করে, আসিরিয়া, আর্মেনিয়া, পারস্য ও আরবে জাফ্রান, তৈল, বস্ত্র চালান দেয়; গ্রীস ও মিশরে কাষ্ঠ বহন করে। তাহারা আবার ইয়োরোপের সর্বত্র বহন করিবার জন্য নানা দ্রব্য বোঝাই করিয়া আনে। যেখানে সমুদ্রে শেষ হইয়াছে, সেখানে নাবিকেরা জাহাজ ছাড়িয়া স্থলপথে গিয়া ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য করে। তাহারা ককেসাস, পর্বত এবং গঙ্গা নদী অতিক্রম করিয়া পূর্বে সমুদ্রে গিয়া উপনীত হয়।”—The Venetian Republic.