বাসীরা (দক্ষিণ চীনারা) ব্যবসা বাণিজ্যে চিরদিনই অগ্রণী, তাহারা উন্নতিশীল জাতিদের সংস্পর্শে আসিবার সুযোগ পাইয়াছে এবং ফলে তাহাদের দৃষ্টি উদার হইয়াছে।[১]
বাংলাদেশ তথা হিন্দু ভারত নির্বোধের মত জাতিভেদ প্রথাকে গ্রহণ করিয়াছিল এবং সমুদ্রযাত্রাকে নিষিদ্ধ করিয়াছিল। ইহার ফলে বহির্জগৎ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া সে কূপমণ্ডূক হইয়া উঠিল।—হিন্দু, সমাজের বাহিরের লোকদের সে ‘ম্লেচ্ছ’ আখ্যা দিল। সে নিজে ইচ্ছা করিয়া অন্ধ হইল এবং ধ্বংসের অভিমুখে দ্রুতবেগে ধাবিত হইতে লাগিল, আর তাহার দেশ, বিদেশী আততায়ীদের মৃগয়া ক্ষেত্র হইয়া দাঁড়াইল। কবির ভাষায় সত্যই—
“নিয়তির কঠোর বিধানে তাহার পূর্ব গৌরবের উচ্চ শিখর হইতে সে পতিত ধল্যবলুণ্ঠিত।”
(৩) জাতি সংমিশ্রণের সম্ভাবনা না থাকাতে, কলিকাতার
ঐশ্বর্যশালী অবাঙালীরা স্বতন্ত্র ভাবে বাস করিতেছে—
বাংলাদেশের সুখ দুঃখের সঙ্গে তাহাদের
কোন সম্বন্ধ নাই।
লম্বার্ডরা যখন ইংলণ্ডে যাইয়া বাস করে, তখন তাহারা তাহাদের ব্যাঙ্ক ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতা সঙ্গে লইয়া গিয়াছিল; লণ্ডন সহরের লম্বার্ড ষ্ট্রীট এখনও তাহাদের ঐশ্বর্য ও প্রভাবের স্মৃতি বহন করিতেছে।[২] আল্ভার অত্যাচারের ফলে ফ্লেমিশরা ইংলণ্ডে গিয়া বাস করিয়াছিল। ইহারাই পশম ব্যবসায়ে উন্নত প্রণালীর প্রবর্তন করে। হিউগেনটস্রাও ইংলণ্ডের ঐশ্বর্য গঠনে এইরূপে সহায়তা করিয়াছে। ফ্রান্স যখন ধর্মান্ধতার বশবর্তী হইয়া “এডিক্ট অব ন্যব ন্যাণ্টিস্” প্রত্যাহার করে, তখন তাহার প্রায় ৪০ হাজার হিউগেনট অধিবাসী নিকটবর্তী প্রোটেষ্টাণ্ট দেশ সমূহে গিয়া আশ্রয় নেয়। ঐ সব দেশে তাহারা তাহাদের বীরত্ব, সাহস ও কর্মকুশলতার অবদান বহন করিয়া লইয়া গিয়াছিল। বলা বাহল্য ইহারা দুই এক পুরুষের মধ্যেই ঐ সব দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে মিশিয়া
- ↑ প্রণালী উপনিবেশ, ডাচ ইস্ট ইণ্ডিস এবং ফিলিপাইন দ্বীপ পুঞ্জে চীনারা সংখ্যাবহুল এবং শক্তিশালী। প্রধানতঃ তাহাদেরই প্রদত্ত অর্থে চীনের জাতীয় আন্দোলন পরিচালিত হইয়াছে, সম্পদের দিনে ও বিপদের দিনে সমান ভাবে তাহারা সাহায্য করিয়াছে। মালয়েসিয়ার চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় কাণ্টনের অধিবাসীদের বংশধর। তাহারা চীনাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক জাতীয়তাবাদী।”—Upton Close: The Revolt of Asia.
পুনশ্চ—“দক্ষিণ চীন ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্য দিয়া প্রথমে বহির্জগতের সংস্পর্শে আসিয়াছিল।... দক্ষিণ চীনই বণিক, নাবিক ও লস্করের জন্ম দিয়াছিল এবং তাহারা বহু বিচিত্র দেশ ও তাহার অধিবাসীদের সংস্পর্শে আসিয়াছিল।
“এই দক্ষিণ চীন হইতে প্রথম ছাত্রের দল আসিয়াছিল যাহারা প্রাচীন প্রথা ও সংস্কারের বাহিরে বিদেশে ‘বর্বরদের’ নিকট শিক্ষা লাভ করিতে গিয়াছিল। পাশ্চাত্যের নাবিক, বণিক ও মিশনারীদের শিল্প ও বিজ্ঞানের সঙ্গে এই দক্ষিণ চীনের লোকেরা বহুকাল হইতেই পরিচিত ছিল। সুতরাং তাহাদের নিজেদের সঙ্গে বিদেশীদের পার্থক্য কোথায় তাহা জানিবার জন্য তাহারা কৌতুহলী হইয়া উঠিয়াছিল।”—Monroe: China—A Nation in Evolutio - ↑ ১৩শ হইতে ১৬শ শতাব্দীর মধ্যে পশ্চিম দেশ হইতে যে সব ব্যাঙ্কার ও ব্যবসায়ী আসিয়াছিল, তাহাদের সাধারণ নাম দেওয়া হইত ‘লম্বার্ড’, যদিও তাহারা সকলেই লম্বার্ড প্রদেশের লোক ছিল না।