অ্যানড্রু কার্নেগী কেবল তাঁহার নিজের জন্মভূমিতে নয়, তাঁহার বাসভূমিতেও ‘শ্রমিক প্রতিষ্ঠান’ স্থাপন করিবার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়াছেন। তিনি আমেরিকাতে ‘গবেষণা মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন এবং স্কটল্যাণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহেও বহু অর্থ দান করিয়াছেন। রকফেলারও ঐ উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়াছেন। চীনাদের উন্নতির জন্য এবং গ্রীষ্মদেশীয় রোগ সমূহ (tropical diseases) নিবারণের জন্যও তিনি অজস্র অর্থ ব্যয় করিয়াছেন। যদি সাপ্তাহিক ‘লণ্ডন টাইমসের’ কোন একটি সংখ্যা পড়া যায়, তাহা হইলে দেখা যাইবে, বহু ধনী নিজেদের উইলে লোকহিতের জন্য দান করিয়াছেন এবং ইহার মধ্যে ‘অপাত্রে দান’ খুব কমই আছে। বৎসরের পর বৎসর এইরূপে বহু দানে বিদ্যালয় ও হাঁসপাতাল সমূহ পুষ্ট হইতেছে অথবা নূতন বিশ্ববিদ্যালয়, বা যক্ষা, ক্যান্সার, গ্রীষ্ম দেশীয় রোগ সমূহ সম্বন্ধে গবেষণা করিবার জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত অর্থ জমা হইতেছে।[১]
‘বার্নাডোস হোমস’, যক্ষ্মানিবাস, সহরের জনবহুল অঞ্চলে নূতন পার্ক, কৃষির উন্নতি, গোজাতির উন্নতি—এই সব কাজে পাশ্চাত্যের দাতারা প্রতিনিয়তই অর্থ দান করিতেছেন। আর আমাদের দেশে ধনী ব্যবসায়ীদের শিক্ষা দীক্ষা নাই, তাহাদের দৃষ্টি অনুদার, সঙ্কীর্ণ, তাহারা বহু অর্থ ব্যয় করিয়া যে সব মন্দির নির্মাণ বা সংস্কার করে, সেগুলি কেবল চরিত্রহীন পুরোহিত এবং গাঁজাখোর বাবাজী ও সাধুদের আড্ডা।
ভারতের মধ্যে কেবল একটি সম্প্রদায় ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভূত উন্নতি করিয়াছে। পক্ষান্তরে শিক্ষা সংস্কৃতিতেও তাঁহারা উন্নত, তাঁহাদের মধ্যে বহু দাতা ও দেশহিতৈষীর উদ্ভব হইয়াছে। আমি বোম্বাইয়ের পার্শীদের কথা বলিতেছি। তাঁহাদের সংখ্যা অতি অল্প—মোট এক লক্ষের বেশী নহে। কিন্তু এই ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে উদার দৃষ্টি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বদান্যতার অভাব নাই। ইংরাজ ও আমেরিকান লোকহিতৈষী দাতাদের সঙ্গে তাঁহাদের তুলনা করা যাইতে পারে। জে. এন. টাটা, কামা, জিজিভাই, ওয়াদিয়া প্রভৃতি কয়েকটি প্রসিদ্ধ পরিবার ব্যতীতও, এমন বহু পার্শী ধনী পরিবার আছেন, যাঁহারা দানশীলতার জন্য বিখ্যাত।[২]
গুজরাটীরা কর্মশক্তি ও লোকহিতৈষণায় পার্শীদের চেয়ে পশ্চাৎপদ নহে। বিঠলদাস ঠাকুরসী অথবা গোকুলদাস তেজপাল ব্যতিক্রম নহেন। পুরুষোত্তমদাস ঠাকুরদাসের মত লোক স্ব-সম্প্রদায়ের অলঙ্কার স্বরূপ। তিনি যে কেবল বিচক্ষণ ব্যবসায়ী তাহা নহে,
- ↑ প্রসিদ্ধ কৃত্রিম রেশম ব্যবসায়ী মিঃ স্যামূয়েল কোর্টল্ড মিড্লসেক্স হাসপাতালে একটি নূতন ইনস্টিটিউটের জন্য পূর্বে ৪০ হাজার পাউণ্ড দিয়াছিলেন, সম্প্রতি তিনি ঐ উদ্দেশ্যে আরও ২০ হাজার পাউণ্ড দান করিয়াছেন।
স্যার উইলিয়াম মরিস মোটর গাড়ী নির্মাতা। তিনি সম্প্রতি ঘোষণা করিয়াছেন যে, এ বৎসর তাঁহার ফার্ম হইতে তিনি যে ২০ লক্ষ পাউণ্ড লভ্যাংশ পাইবেন, তাহার সমস্তই লোকহিতের জন্য ব্যয় করিবেন।
লেডী হাউস্টন লণ্ডনের সেণ্ট টমাস হাসপাতালে বিনা সর্তে এক লক্ষ পাউণ্ড দান করিয়াছেন।
সম্প্রতি একটি তারের খবরে (নভেম্বর, ১৯৩১) প্রকাশ পাইয়াছে,—স্যার টমাস লিপটনের সম্পত্তির ট্রাস্টিগণ সম্পত্তির সমস্ত আয়ই গ্লাসগো, লণ্ডন এবং মিড্লসেক্সের নিকটবর্তী হাসপাতাল ও জনহিতকর প্রতিষ্ঠানসমূহে দান করিবেন স্থির করিয়াছেন। এই সম্পত্তির মূল্য দশ লক্ষ পাউণ্ডের বেশী হইবে। - ↑ পরলোকগত স্যার ডোরাব টাটার উইল অনুসারে তাঁহার সমস্ত সম্পত্তি লোকহিতকর কার্যে দান করা হইয়াছে। এই সম্পত্তির মূল্য ২।৩ কোটী টাকা।