পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৪
আত্মচরিত

কৃপণ নহে; যখনই কোন স্থানে বন্যা বা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখনই তাহারা মুক্তহস্তে দান করে। কিন্তু শিক্ষা ও সংস্কৃতির অভাব এবং সঙ্কীর্ণ দৃষ্টির জন্য তাহার দান অনেক সময়ই অপাত্রে ন্যস্ত হয়। সুখের বিষয়, ইহার ব্যতিক্রম আছে। ঘনশ্যাম দাস বিড়লার মত লোক যে কোন সম্প্রদায়ের গৌরব স্বরূপ। ভারতের আর একজন মহৎ সন্তান, যিনি দেশপ্রেম, অতুলনীয় ত্যাগ ও অশেষ বদান্যতায় দেশবাসীর চিত্তে স্থায়ী আসন অধিকার করিয়াছেন সেই শেঠ যমুনালাল বাজাজও এই মাড়োয়ারী সম্প্রদায়ের লোক। আশার কথা, মাড়োয়ারীদের মধ্যে, বিশেষভাবে আগরওয়ালা শাখার মধ্যে, ধীরে ধীরে নব জাগরণ হইতেছে।[]

 সম্প্রতি আমি কয়েকজন তরুণ মাড়োয়ারীর সংস্পর্শে আসিয়াছিলাম। তাহারা মহদন্তঃকরণবিশিষ্ট এবং ভবিষ্যতে মাড়োয়ার, বিকানীর, যোধপুরের মুখে উজ্জ্বল করিবে। কিন্তু বর্তমানে তাহাদের কোন প্রতিষ্ঠা নাই।

 এই ছত্রগুলি দুই বৎসর পূর্বে লিখিত হয়। সম্প্রতি একটি ঘটনা ঘটিয়াছে, যাহা হইতে আমার পূর্বোক্ত অভিযোগগুলি প্রমাণিত হইবে:—

 “পিলানী সহর জয়পুরের মহারাজা বাহাদুরের আগমনে সরগরম হইয়া উঠে; গত ৬ই ডিসেম্বর তারিখে উক্ত সহরে নূতন বিড়লা কলেজ ভবনের প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যেই মহারাজার আগমন হইয়াছিল।”

* * * *

 “১৯২৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ে উন্নীত হয় এবং ছাত্রাবাসের জন্য প্রকাণ্ড গৃহ সমূহ নির্মিত হয়। রাজা বলদেওদাস বিড়লা এই বিদ্যালয়ের একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করেন এবং উহার ব্যয় নির্বাহের জন্য ‘বিড়লা এডুকেশন ট্রাষ্ট’ করেন। ট্রাষ্টের ভাণ্ডারে এখন ১২ লক্ষ টাকা জমা হইয়াছে। ১৯২৯ সালে স্কুলটি ইন্‌টারমিডিয়েট কলেজে পরিণত হয়, ১৯৩০ সালে উহার সঙ্গে বাণিজ্য শিক্ষার ক্লাস যোগ করা হয়।”— লিবার্টি, ৮ই ডিসেম্বর ১৯৩১।

 বিড়লারা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২৬ হাজার টাকা দান করিয়াছেন। কিন্তু তাঁহাদের জন্মভূমিতে কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁহারা ১২ লক্ষ টাকারও বেশী দান করিয়াছেন।


  1. মাড়োয়ারী নিখিল ভারত আগরওয়ালা মহাসভায় দুইটি অধিবেশনে সভাপতিরা যে বক্তৃতা করিয়াছেন, তুলনার জন্য তাহা হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত হইল:—
     “প্রতিদিনই আমরা হৃদয়বিদারক পারিবারিক অশান্তির কথা শুনিতে পাই, উহা এ যুগের অনুপযোগী বিবাহ প্রথারই কুফল। বালিকাকে অল্প বয়সেই তাহার পিতৃগৃহের লেখাপড়া খেলাধূলার আবহাওয়ার মধ্য হইতে ছিনাইয়া লওয়া হয় এবং তাহারই মত একটি নির্দোষ বালকের সঙ্গে তাহার বিবাহ হয়। কিছুদিন পরেই আমরা শুনিতে পাই যে, বালকটির মৃত্যু হইয়াছে এবং একটি বালবিধবা রাখিয়া গিয়াছে। জীবনে ঐ বালবিধবা যে অপরিসীম দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে, তাহা অবর্ণনীয়। এরূপ দৃষ্টান্তও দেখিতে পাই, একজন বৃদ্ধ জীবনের শেষ সীমায় আসিয়া তাহার নাতিনীর বয়সী বালিকাকে বিবাহ করে, কেন না উক্ত বৃদ্ধ বিপত্নীক জীবন যাপন করিতে অক্ষম। আপনারাই বিবেচনা করুন এরূপ বিবাহের কি বিষময় পরিণাম, ইহা সমাজ শরীরকে ক্ষয় করিতেছে।”
     ১২শ নিখিল ভারত মাড়োয়ারী আগরওয়ালা মহাসভার সভাপতিরূপে শ্রীযুত ডি. পি. খৈতান বলেন, শিক্ষার অভাব, রক্ষণশীলতা, বাল্যবিবাহ, পর্দা প্রথা প্রভৃতি সামাজিক উন্নতির গতি প্রতিহত করিতেছে।