হিন্দু সমাজের জটিল ব্যবস্থা ও স্তরভেদের মধ্যে বহু দুর্বল স্থান আছে। এক দিকে মুষ্টিমেয় উচ্চশিক্ষিত ও বুদ্ধিমান লোক—ইহারা প্রায় সকলেই উচ্চবর্ণীয়; আর এক দিকে লক্ষ লক্ষ অনুন্নত শ্রেণীর লোক, ইহারা সকলেই নিম্ন জাতির। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ইহাদেরই মধ্যে গণ্য। সুতরাং শোষোক্ত শ্রেণী যে উচ্চ শ্রেণীদের আহ্বানে সাড়া দিবে না, ইহা স্বাভাবিক। বিশাল হিন্দু সমাজ বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মত; বিভিন্ন জাতি এবং উপজাতি উহার স্থানে স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের মত ছড়াইয়া আছে—তাহাদের মধ্যে দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান। একই ভাব ও জীবন-প্রবাহ এই সমাজের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত নহে। উচ্চবর্ণীয় ও নিম্নবর্ণীয়দের মধ্যে নিয়ত কোলাহলে—এই সমাজের অনৈক্য ও বিচ্ছেদের ভাব প্রকাশ পাইতেছে।
রবীন্দ্রনাথ চিরদিনই ‘অচলায়তন’ হিন্দু সমাজের নানা অর্থহীন প্রথা ও জীর্ণ আচারের নিন্দা করিয়াছেন। মহাত্মা গান্ধীর ৬৩তম জন্মদিনে—রবীন্দ্রনাথ দেশবাসীর নিকট যে বাণী প্রদান করেন, তাহাতে তিনি বলিয়াছেন:—
“যুক্তিহীন কুসংস্কার, জাতিভেদ এবং ধর্মের গোঁড়ামি, এই তিন মহাশত্রুই আমাদের সমাজের উপর এতদিন প্রভুত্ব করিয়া আসিতেছে। সমুদ্রপার হইতে আগত যে কোন বিদেশী শত্রুর চেয়ে উহারা ভয়ঙ্কর। এই সব পাপ দূর করিতে না পারিলে, কেবল মাত্র ভোট গণনা করিয়া বা রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করিয়া আমরা স্বাধীনতা লাভ করিতে পারিব না। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে এই কথাই আমাদের স্মরণ করিতে হইবে, কেননা মহাত্মাজী নবজীবনের সাহস এবং স্বাধীনতালাভের দুর্জয় সঙ্কল্প আমাদিগকে দান করিয়াছেন। জড়তা ও অবিশ্বাস হইতে আত্মশক্তি ও আত্মনির্ভরতা—মহাত্মা তাঁহার অতুলনীয় চরিত্র প্রভাবে এই বিরাট আন্দোলনই দেশে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা আমরা উপলব্ধি করিতেছি। সেই সঙ্গে ইহাও আমরা আশা করি যে, এই আন্দোলনে জাতির মনে যে শক্তি সঞ্চার হইবে, তাহার ফলে আমাদের বহু দিনের সামাজিক কুপ্রথা এবং জীর্ণ আচারের পুঞ্জীভূত জঞ্জাল রাশিও দূর হইবে।”
(৫) বংশানুক্রম ও আবেষ্টন—সুপ্রজনন বিদ্যা—
আমার জীবনে ঐগুলির প্রভাব সম্বন্ধে আলোচনা
একটি দরিদ্র কৃষক বালিকা তাহার পিতার মেষপাল চরাইতে চরাইতে, এক অতিপ্রাকৃত দৃশ্য দর্শন করিল। সে স্পষ্ট দৈববাণী শুনিতে পাইল;—দৈববাণী তাহাকে অর্লিন্সকে পরাধীনতা হইতে মুক্ত করিবার জন্য অনুজ্ঞা দিতেছে। সে অমানুষিক শক্তি লাভ করিল এবং বহু দুঃসাহসিক বীরত্ব প্রদর্শন করিল। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাট্যকার “সোয়ান অব
হইয়া পড়ে। ইহার মধ্যে কোন দিনই জাতিবৈষম্য নাই। ইসলামের নিকট সব মুসলমানই ভাই ভাই, তাহারা—বাণ্টু, বা বার্বার, তুর্ক বা পারসীক, ভারতবাসী অথবা জাভাবাসী—যাহাই হোক না কেন। এ কেবল ভাবজগতের সাম্য নহে, দৈনন্দিন জীবনে ও সামাজিক আচার ব্যবহারে এই সাম্যের প্রত্যক্ষ পরিচয় পাওয়া যায়। এই সাম্যই দরিদ্র ও নিম্ন স্তরের লোকদের ইসলাম ধর্মে আকর্ষণ করে; তাহারা জানে যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিলে, অন্য সমস্ত মুসলমানের সমান হইবে। আমার মনে হয়, আফ্রিকা মহাদেশ জয় করিবার জন্য খৃষ্টান ধর্ম ও মুসলমান ধর্মের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা চলিতেছে, তাহাতে ইসলামই বিজয়ী হইবে। খৃষ্টান মিশনারীরা যদি বর্ণবৈষম্যের কুসংস্কার, শ্রেষ্ঠত্বের অভিমান ত্যাগ করিয়া খৃষ্টান ধর্মের সত্যকার ভ্রাতৃত্ববাদ আন্তরিক ভাবে প্রচার না করে, তবে তাহারা ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়াইতে পারিবে না।”
মসজিদে আমীর এবং ফকির পাশাপাশি বসিয়া উপাসনা করে। এই কারণেই মালয় উপনিবেশ, জাভা, বোর্নিও এবং সুমাত্রায় ইসলাম ধর্ম এত দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করিয়াছে।