অ্যাভন” (অ্যাভনের শ্বেত হংস) বাণীর বরপুত্র সেক্সপীয়রের পিতামাতা কবিত্বের ধার ধারিতেন না ও নিরক্ষর ছিলেন। যীশু, মহম্মদ, কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, অথবা নিউটনের জীবনে এমন কোন গুণ ছিল না, যাহাকে বংশানুক্রমিক মনে করা যাইতে পারে।
প্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ উইলিয়ম হার্শেল হ্যানোভার সহরের সৈন্যবিভাগের একজন কর্মচারীর পুত্র ছিলেন। হার্শেলের মাতার সম্বন্ধে বলা হইয়াছে, “তিনি নিজে লিখিতে জানিতেন না, বিদ্যাচর্চার প্রতি বিমুখ ছিলেন, নবযুগের ভাবধারাও তাঁহার মনকে স্পর্শ করে নাই। কিন্তু তাঁহার পুত্রকন্যাদের সকলেরই সঙ্গীত বিদ্যার প্রতি অনুরাগ ছিল, হার্শেল ১৭ বৎসর বয়সে ইংলণ্ডে গিয়া অর্গানবাদক এবং সঙ্গীতশিক্ষকরূপে জীবিকা অর্জন করেন। প্রত্যহ প্রায় ১৪ ঘণ্টা কাল অর্গান বাজাইয়া ও সঙ্গীত শিক্ষা দিয়া তিনি রাত্রিকালে নির্জনে গণিত শাস্ত্র, আলোকবিদ্যা, ইটালীয় অথবা গ্রীক ভাষা—অধ্যয়ন করিতেন। এই সময়ে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রও অধ্যয়ন করিতে আরম্ভ করেন।” (লজ)।......“আলোকবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যা তিনি গভীর ভাবে আলোচনা করিতেন, বালিশের পরিবর্তে বই মাথায় দিয়া ঘুমাইতেন, আহারের সময়েও পড়িতেন এবং অন্য কোন বিষয় চিন্তা করিতেন না। তিনি জ্যোতিষের সমস্ত অত্যাশ্চর্য রহস্য জানিবার জন্য সঙ্কল্প করিয়াছিলেন। যে গ্রেগোরিয়ান রিফ্লেক্টর যন্ত্র তিনি ব্যবহার করিতেন, তাহাতে সন্তুষ্ট না হইয়া, তিনি নিজে দূরবীক্ষণ তৈরী করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি তাঁহার শয়ন গৃহকেই কারখানায় পরিণত করিলেন এবং অবসর সময়ে দর্পণ লইয়া ঘষা-মাজা করিতে লাগিলেন।” “সঙ্গীত সম্বন্ধে প্রতিভার পশ্চাতে বংশানুক্রমিক গুণ থাকা চাই, এ কথা হ্যাণ্ডেলের জীবনে প্রমাণিত হয় না। তাঁহার পরিবারের কেহই সঙ্গীত বিদ্যা জানিত না। বরং হ্যাণ্ডেলের পিতামাতা তাঁহার বাল্যকালে তাঁহাকে গান বাজনা করিতে দিতেন না। কিন্তু তৎসত্ত্বেও হ্যাণ্ডেল সমস্ত বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করিয়া আট নয় বৎসর বয়সে সুরশিল্পী হইয়া উঠিলেন।” রামমোহন রায় গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঐ সময়ে সমাজে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও গোঁড়ামি প্রবল ছিল। কৈশোর বয়সেই একেশ্বর বাদ সম্বন্ধে তিনি পার্সীতে একখানি পুস্তিকা লেখেন,—উহার ভূমিকা ছিল আরবী ভাষায়। তাঁহার এই বিপ্লবমূলক সামাজিক মতবাদের জন্য তিনি পিতৃগৃহ হইতে বিতাড়িত হইলেন। এইরূপ অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে। বস্তুতঃ গ্যাল্টন, কার্ল পিয়ার্সন প্রভৃতি বংশানুক্রমিক বিদ্যার ব্যাখ্যাতারা যেখানে বংশগত গুণের একটি দৃষ্টান্ত দিবেন, তৎস্থলে তাহার বিপরীত নয়টি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে।
কেবল সহোদর ভ্রাতাদের নয়, যমজ ভ্রাতাদেরও রুচি, প্রবৃত্তি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ বিভিন্ন রকমের দেখা যায়। মহাকবি মিলটন ক্রমওয়েলের একজন প্রধান সমর্থক; পক্ষান্তরে তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্রিষ্টোফার ইংলণ্ডের গৃহযুদ্ধের সময় রাজতন্ত্রবাদী ছিলেন এবং বৃদ্ধ বয়সে তিনি কেবল পোপের প্রতি ভক্তিসম্পন্ন হন নাই, দ্বিতীয় জেমসের রাজত্বে বিচারকের পদও গ্রহণ করিয়াছিলেন। রাজশক্তিকে তিনি সর্বদা সমর্থন করিবেন, এরূপ প্রতিশ্রুতিও দিয়াছিলেন।[১]
- ↑ মেণ্ডেলের নিয়ম এবং বাইসমানের বীজাণুতত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত আধুনিক সুপ্রজনন বিদ্যার এই সব আপাতবিরোধী ঘটনার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু উহা অসম্পূর্ণ।
জনৈক আধুনিক বিশেষজ্ঞ বলিয়াছেন—“ব্যক্তির চরিত্র-বিকাশের উপর বংশানুক্রম ও পারিপার্শ্বিকের প্রভাব সম্পূর্ণ বিভিন্ন প্রকারের। বংশানুক্রম ব্যক্তির চরিত্রের ভবিষ্যৎ বিকাশের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে,—পারিপার্শ্বিক কতকগুলি গুণের বিকাশে সহায়তা করে, কতকগুলিতে বাধা দেয়। কিন্তু পারিপার্শ্বিক নূতন কিছু সৃষ্টি করিতে পারে না।”