পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ
৩৫৯

পরিশ্রমের পুরষ্কার কয়েক বৎসর পরে মিলিল। ১৮৭৮ সালে আমাদের কলিকাতার বাসা তুলিয়া দিতে হইল, কেননা পিতা তখন ঋণগ্রস্ত হইয়া সব দিকে খরচ কমাইতে বাধ্য হইলেন। ৮০নং মুক্তারাম বাবুর ষ্ট্রীটের একটি বাড়ীতে আশ্রয় লইতে বাধ্য হইলাম। এই সময় আমার ব্যবসাবুদ্ধি কাজে লাগিল। পিতা আমার মাসিক খরচের টাকা পাঠাইতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেন। কিন্তু তাঁহার অবস্থা বুঝিয়া, আমি তাঁহাকে এই দুশ্চিন্তা হইতে নিষ্কৃতি দিবার জন্য ব্যস্ত হইলাম। আমি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিলাম, উইলসনের অভিধান প্রতি খণ্ড ছয় টাকা মূল্যে বিক্রয় হইবে। কলিকাতার পুস্তক বিক্রেতাদের নিকট হইতে এবং ভারতের নানাস্থান হইতে অর্ডার আসিতে লাগিল। বই বেশ বিক্রী হইতে লাগিল এবং আমি সাহস পূর্বক পুস্তক বিক্রয়ের এজেন্সি খুলিয়া বসিলাম। জ্ঞানেন্দ্রচন্দ্র রায় অ্যাণ্ড ব্রাদার্সের নামে উইলসনের অভিধান প্রকাশিত হইয়াছিল, সুতরাং আমার এজেন্সিরও ওই নাম দিলাম। আমার কোন মূলধন ছিল না, সুতরাং অভিধান বিক্রয়ের বিজ্ঞাপনের নীচে এই কথাটিও লেখা থাকিল—“মফঃস্বলের অর্ডার যত্নের সহিত সরবরাহ করা হয়।” বাড়ীর দরজায় “জি. সি. রায় অ্যাণ্ড ব্রাদার্স, পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক”—এই নামে একখানি সাইন বোর্ড টাঙাইয়া দিলাম। মনে মনে সঙ্কল্প করিলাম যে, কলেজের পড়া শেষ হইলে আমি পুস্তক বিক্রয়ের ব্যবসা অবলম্বন করিব।[] ঐ সময়েও সরকারী চাকরীর প্রতি আমার একটা বিরাগের ভাব ছিল। কিন্তু গিলক্রাইষ্ট বৃত্তি পাইয়া আমার সমস্ত মতলব বদলাইয়া গেল। ভগবানের ইচ্ছায়, আমার যাহা কিছু শক্তি ও যোগ্যতা বিজ্ঞানসেবা ও দেশের অন্যান্য নানা কাজে নিয়োজিত হইল।


  1. এখানে বলা বোধ হয় অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে, আমার তিন জন ছাত্র (রসায়নে এম. এস-সি.) ক্ষুদ্র আকারে পুস্তক ব্যবসা আরম্ভ করিয়া, এখন উহা সুবৃহৎ ব্যবসায়ে পরিণত করিয়াছেন; বলা বাহুল্য যে, তাঁহারা আমার দ্বারা অণুপ্রাণিত হইয়াছেন। তাঁহাদের ফার্মের নাম চক্রবর্তী, চাটার্জী অ্যাণ্ড কোং, পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক। আমার বাল্যকালের মনের আকাঙ্ক্ষা এই দিক দিয়া চরিতার্থ হইয়াছে।