অন্যতম প্রবর্তক আনন্দমোহন বসু এত দ্রুত অনর্গল বক্তৃতা করিতেন যে, রিপোর্টারদের পক্ষে তাঁহার বক্তৃতা লিপিবদ্ধ করা কঠিন হইত। তাঁহার বক্তৃতায় কিছু অনাবশ্যক উচ্ছ্বাসের কথা থাকিত। এই পুস্তকের পূর্বাংশে তাঁহার একটি বক্তৃতা উদ্ধৃত হইয়াছে। কেশবচন্দ্র সেনের বক্তৃতা ও ধর্মোপদেশও আমি বহুবার শুনিয়াছি। তিনি ছিলেন একাধারে ভাবুক ও ঋষি; কখনও যুক্তিতর্ক তুলিতেন না, আবেগময় ভাষায় নূতন বাণী শুনাইতেন।
আমি কয়েকজন প্রসিদ্ধ রাজনৈতিক নেতা ও বক্তার কথা বলিলাম। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রিশত বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে যে প্রসিদ্ধ সম্মেলন হইয়াছিল, তাহার কথা স্বভাবতই আমার মনে আসিতেছে। যে সমস্ত বিখ্যাত অতিথি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিমন্ত্রিত হইয়া দেশ বিদেশ হইতে আসিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকে মহাসমারোহে সম্বর্ধনা করা হয়। এত বেশী বিখ্যাত পণ্ডিত ও প্রতিভাশালী ব্যক্তির একত্র সমাগম দেখিবার সৌভাগ্য কদাচিৎ ঘটে। এই সম্মেলনে সুপ্রসিদ্ধ সাফী ছিলেন; রোমে যখন সাধারণ তন্ত্র ঘোষণা করা হয়, তখন ম্যাজিনি, আর্মেলিনি এবং সাফী, এই তিনজনকে সর্বময় কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। সুয়েজ খালের বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার ফার্ডিনাণ্ড লেসেপ্স্, জীবাণু তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা প্রসিদ্ধ রাসায়নিক পাস্তুর, পদার্থবিজ্ঞানবিৎ শারীরতত্ত্ববিৎ এবং গণিতজ্ঞ হারমান ভন হেল্মহোল্জ, আমেরিকার প্রসিদ্ধ কবি জেমস রাসেল লাওয়েল, ইংলণ্ডের বিখ্যাত কবি রবার্ট ব্রাউনিং-সম্মেলনে এই সব বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। সাফী ও হেল্মহোল্জ বিশুদ্ধ ইংরাজীতে বক্তৃতা করেন এবং লেসেপ্স্ ও পাস্তুর মাতৃভাষা ফরাসীতে বক্তৃতা করেন।
আমি প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে এই বিবরণ লিখিতেছি, আমার বিশ্বাস আমার বিবরণে কোন ভুল হয় নাই।