সময় নষ্ট করে। তাহার এই মিথ্যা জ্ঞান হইতে দূরে থাকিতে হইবে। অজ্ঞতা অপেক্ষাও ইহা ভয়ঙ্কর। কর্মতৎপরতাই প্রকৃত জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায়।” কথাগুলি খাঁটি সত্য। ঐ প্রসিদ্ধ লেখকের কথার প্রতিধ্বনি করিয়া আমিও বলি,—“কোন ব্যক্তি যে বিষয়ে নিজে কিছু জানে না, সে যদি অপর এক অযোগ্য ব্যক্তিকে সেই বিষয়ে শিক্ষা দেয় এবং তাহাকে বিদ্যালাভের জন্য সার্টিফিকেট দেয়, তবে, শিক্ষার্থীটি ‘ভদ্রলোকের শিক্ষা’ সমাপ্ত করিল বলা যায়।” কিন্তু এই শিক্ষার ফলে তাহার সমস্ত জীবন ব্যর্থ হইয়া যায়।
আমি বাঙালী চরিত্র বিশ্লেষণ করিয়া তাহার দোষ-ত্রুটি দেখাইতে দ্বিধা করি নাই। অস্ত্রচিকিৎসকের মতই আমি তাহার দেহে ছুরি চালাইয়াছি এবং ব্যাধিগ্রস্ত অংশ দূর করিয়া তাহাতে ঔষধ প্রয়োগ করিতে চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু বাঙালী আমারই স্বজাতি এবং তাহাদের দোষ-ত্রুটীর আমিও অংশভাগী। তাহাদের যে সব গুণ আছে, তাহার জন্যও আমি গর্বিত, সুতরাং বাঙালীদের দোষ কীর্তন করিবার অধিকার আমার আছে।
আমাদের চোখের সম্মুখেই পৃথিবীতে নূতন ইতিহাস রচিত হইতেছে। বেশী দিন পূর্বের কথা নয়, চীনা ও তুর্কীরা পাশ্চাত্যের অবজ্ঞা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের পাত্র ছিল। তাহারা অলস, দুর্বল, ক্ষয়গ্রস্ত জাতির দৃষ্টান্তরূপে উল্লিখিত হইত। কিন্তু ঈশ্বরপ্রেরিত নেতাদের পরিচালনায় তাহারা শতাব্দীর নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠিয়াছে, নিজেদের জড়তা ও নৈরাশ্য পরিহার করিয়াছে এবং জগতের বিস্ময়বিস্ফারিত চোখের সম্মুখে নবযৌবনের শক্তি লাভ করিয়াছে।
সুতরাং বাঙালী তথা ভারতবাসী—কেন পশ্চাৎপদ থাকিবে, তাহাদের জাতীয় জীবন কেন পূর্ণতা লাভ করিবে না, তাহার কোন কারণ আমি দেখিতে পাই না।
“এরিয়োপেজিটিকার” কবি মিল্টনের গম্ভীর উদাত্ত বাণী আমার স্মৃতিপথে ভাসিয়া আসিতেছে—
“আমার মানস নেত্রে আমি একটি মহৎ জাতির নব অভ্যুদয় দেখিতেছি,—বীর্যশালী কেশরীর মতই নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠিয়া সে তাহার কেশর সঞ্চালন করিতেছে।”