পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
আত্মচরিত

শোণিততুল্য অর্থ শোষণ করিয়া বাহিরে চালান দিবার তাহারাই প্রধান যন্ত্রস্বরূপ হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

 ললিত মাধব সেনগুপ্ত, এম, এ, ১৯৩০ সালের ৬ই জুলাইয়ের ‘অ্যাড্‌ভ্যান্স’ পত্রে এই “পরিত্যক্ত গ্রাম” সম্বন্ধে লিখিয়াছেন:—

 “যদি কেহ বাংলার পল্লীতে গিয়া দুদিন থাকেন, তিনিই পল্লীবাসীদের জীবনযাত্রার প্রণালী দেখিয়া স্তম্ভিত হইবেন। বস্তুতঃ, এখন পল্লীজীবনের প্রধান লক্ষণই হইতেছে— আলস্য। কোন গ্রামবাসী দিনের অধিকাংশ সময় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বসিয়া গল্পগুজব করিতেছে, এ দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। এমন কি ফসলের সময়েও তাহাকে তেমন উৎসাহী দেখা যায় না। সে তাহার পিতৃপিতামহের চাষের প্রণালী যন্ত্রচালিতবৎ অবলম্বন করে এবং ফসলের সময় গেলেই, আবার পূর্ববৎ আলস্যে কাল যাপন করে। বৎসরের পর বৎসর পুতুলের মত যে ভাবে সে চাষ করিয়া আসিতেছে, সে চিন্তাও করে না— তাহা অপেক্ষা কোন উন্নততর প্রণালী অবলম্বন করা যায় কি না।

 সুতরাং গ্রামের প্রধান লক্ষণই হইল আলস্য। আর আলস্যের স্বাভাবিক পরিণাম দারিদ্র্য, দারিদ্র্যের পরিণামে কলহ, মামলা মোকদ্দমা এবং অন্যান্য অভিযোগ আসিয়া উপস্থিত হয়। মানুষ সব সময়েই অলস হইয়া থাকিতে পারে না, তাহাকে কিছু না কিছু, করিতেই হইবে। অলস মস্তিষ্কেই যত রকমের শয়তানী বুদ্ধির উদয় হয়। কাজেই পল্লীবাসীরা পরস্পরের সঙ্গে কলহ করে, একের বিরুদ্ধে অন্যকে প্ররোচিত করে এবং যাহারা তাহাদের আন্তরিক উপকার করিতে চেষ্টা করে, তাহাদেরই অনিষ্ট করে। এইরূপে তাহারা তাহাদের সময় ও অর্থের অপব্যয় করে,—যদি সে গুলি যথার্থ কাজে লাগানো যাইত, তবে পল্লীর প্রাণ-শোষণকারী বহু সামাজিক ও আর্থিক ব্যাধি দূর হইতে পারিত।”