পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
৪৫

ট্যাক্স দিবে না—শাসনতন্ত্রের এই মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত করিতে ব্রিটিশ জাতিকে গৃহযুদ্ধ করিয়া রক্তস্রোত বহাইতে হইয়াছিল। আমার বহিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতি যে নিবেদন ছিল, তাহা হইতে কয়েক ছত্র উদ্ধৃত করিতেছি।

 “ভারত-ব্যাপারে ইংলণ্ডের গভীর অবহেলা ও ঔদাসীন্যের ফলেই ভারতের বর্তমান শোচনীয় অবস্থার উৎপত্তি; ইংলণ্ড এ পর্যন্ত ভারতের প্রতি তাহার পবিত্র কর্তব্য পালন করে নাই। তোমরা গ্রেটব্রিটেন ও আয়র্লাণ্ডের ভবিষ্যৎ বংশধরগণ, ভারতে অধিকতর উদার, ন্যায়সঙ্গত ও সহৃদয় শাসন নীতি অবলম্বনের জন্য তোমাদের দিকেই আমরা চাহিয়া আছি। সেই শাসননীতির উদ্দেশ্য কতকগুলি মামুলী বুলি হইবে না, তাহার উদ্দেশ্য হইবে ইংলণ্ড ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর মৈত্রীর বন্ধন স্থাপন। তোমাদের উপরই আমাদের সমস্ত আশা ভরসা। শীঘ্রই এমন দিন আসিবে যে তোমাদিগকেই সেই সাম্রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনার ভার গ্রহণের জন্য আহ্বান করা যাইবে—যে সাম্রাজ্যে সূর্য কখন অস্ত যায় না এবং যাহার রাষ্ট্রিক বলিয়া আমরা গৌরবান্বিত। অদূর ভবিষ্যতে তোমরাই ২৫ কোটী মানবের ভাগ্যবিধাতা হইবে। আমরা আশা করি যে তোমরা যখন রাজ্যশাসনের ক্ষমতা পাইবে, তখন বর্তমান অ-ব্রিটিশ নীতির অবসান হইবে এবং ভারতে এখনকার চেয়ে উজ্জ্বল ও সুখময় যুগের উদয় হইবে।”

 আমি জন ব্রাইটের নিকট বহির একখণ্ড পাঠাইলাম। ঐ সঙ্গে একটী পত্রে ভারতের সঙ্গে ব্রহ্মদেশভুক্তি এবং তাহার ফলে ভারতবাসীদের উপর লবণশুল্ক বাবদ ট্যাক্সবৃদ্ধির অন্যায় নীতির প্রতি তাঁহার দৃষ্টি আকর্ষণ করিলাম। ব্রাইট সুন্দর একখানি পত্রে আমাকে প্রত্যুত্তর দিলেন। উহার সঙ্গে পৃথক একখানি কাগজে লেখা ছিল— “এই পত্র আপনি যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করিতে পারেন।” আমি তৎক্ষণাৎ টাইম্‌স্ ও অন্যান্য সংবাদপত্রে জন ব্রাইটের পত্রের নকল পাঠাইয়া দিলাম। একদিন সকালে উঠিয়া দেখি যে, আমি কতকটা বিখ্যাত লোক হইয়া পড়িয়াছি। খবরের কাগজের বড় বড় ‘পোষ্টারে’ বাহির হইল— “ভারতীয় ছাত্রের নিকট জন ব্রাইটের পত্র”। রয়টারও ঐ পত্রের নিম্নলিখিত সারমর্ম ভারতে তার করিয়া পাঠাইলেন।

 “আমি আপনারই মত লর্ড ডাফরিনের বর্মানীতির জন্য দুঃখিত এবং তাহার তীব্র নিন্দা করি। পুরাতন পাপ ও অপরাধের নীতির ইহা পুনরাবৃত্তি—যে নীতি চিরদিনের জন্য পরিত্যক্ত হইয়াছে বলিয়া আমরা মনে করিয়াছিলাম। ভারতে আমাদের প্রকৃত স্বার্থ কি, তৎসম্বন্ধে এখানকার জনসাধারণের মধ্যে গভীর অজ্ঞতা—সঙ্গে সঙ্গে ঘোর স্বার্থপরতাও রহিয়াছে। সন্নীতি এবং প্রকৃত রাজনীতিজ্ঞতা হইতে ভ্রষ্ট হইলে আমাদের বিপদ ও ধ্বংস অনিবার্য এবং আমাদের বংশধরগণের তাহার জন্য আক্ষেপ করিতে হইবে।”

 অর্ধশতাব্দী পূর্বে লিখিত আমার Essay on India পুস্তিকা হইতে কয়েকছত্র এখানে উদ্ধৃত করিলে অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। ঐ প্রবন্ধ ১৮৮৬ সালে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। আমার মনে হয়, পরবর্তীকালে আমার রচনাশক্তির অধোগতি হইয়াছে। ৫০ বৎসর পূর্বে আমার রচনারীতি যেরূপ স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল ছিল, এখন আর সেরূপ নাই। সম্ভবতঃ রাসায়নিক গবেষণায় নিমগ্ন থাকিবার জন্যই এইরূপে ঘটিয়াছে।

(Essay on India (ভারত বিষয়ক প্রবন্ধ) হইতে উদ্ধৃত)

 “ইংলণ্ড ভারতের সামাজিক উন্নতির জন্য যাহা করিয়াছে তাহা ইঙ্গ-ভারতীয় ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়। রাশিয়া মধ্যে মধ্যে তাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার রুদ্ধ করিয়া দের, কিন্তু ইংলণ্ড অর্ধ-শতাব্দীরও অধিক কাল ধরিয়া সরকারী কলেজ