পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
আত্মচরিত

লঘুপাচ্য অথচ সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া আনিয়াছিলেন। একথা আজ সকৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করিতেছি। আমি কোন কোন অভিজাত ও ‘ফ্যাশন’ওয়ালা লোকদের সঙ্গে পরিচিত হইয়াছিলাম, এমন কি, কখন কখন ‘বলনাচে’ও যোগ দিয়াছিলাম। আমার ভারতীয় পোষাক বন্ধুরা অনেকেই চাহিয়া লইত। একবার একজন উত্তর ভারতীয় মুসলমান বন্ধু তাঁহার জমকাল পোষাক ও পাগড়ী দ্বারা আমাকে সাজাইয়াছিলেন। তাহার ফলে আমি সকলেরই লক্ষ্যের বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছিলাম। খুব সম্ভব লোকে আমাকে কোন ভারতীয় প্রিন্স বা রাজকুমার বলিয়া মনে করিয়াছিল। ‘ফ্যাশনেবল’ সমাজের সঙ্গে পরিচিত হইতে গিয়া আমি দুই একবার এইরূপ কঠিন পরীক্ষায় পড়িয়াছিলাম।

 যথাসময়ে আমি আমার ‘থিসিস’ বা মৌলিক প্রবন্ধ দাখিল করিলাম, একটা বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষাও দিতে হইল। আমার পরীক্ষকগণ সন্তুষ্ট হইলেন এবং ‘ডক্টর’ উপাধির জন্য আমাকে সুপারিশ করিলেন। এরূপ যে হইবে, তাহা পূর্ব হইতেই আমি জানতািম। ঐ বৎসর আমিই একমাত্র ডক্টর উপাধি প্রার্থী ছিলাম এবং অধ্যাপকদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। তাঁহাদের চোখের উপর তাঁহাদেরই পরিচালনাধীনে আমি রসায়ন শাস্ত্রে কতদূর অগ্রসর হইয়াছি এবং আমার মৌলিক গবেষণার মূল্য কি, তাহা তাঁহারা ভালই জানিতেন।

 এই সময়ে রসায়নশাস্ত্রের প্রতি আমি এতদূর অনুরক্ত হইয়াছিলাম যে, আমি আরও এক বৎসর এডিনবার্গে থাকিয়া মনোমত উহার চর্চা করিব, স্থির করিলাম। আমি হোপ প্রাইজ স্কলারশিপ পাইয়াছিলাম, গিলক্রাইষ্ট এনডাউমেণ্টের ট্রাস্টিরাও আমার বৃত্তি শেষ হুইলে আরও ৫০ পাউণ্ড আমাকে সানন্দে পুরস্কার দিয়াছিলেন। তখনকার দিনে বিজ্ঞানে ‘ডক্টর’ উপাধি খুব কম লোকেই পাইত, এখনকার মত তাহাদের সংখ্যা এত বেশী ছিল না। সমাজে আমার একটু প্রতিষ্ঠা হইল বলিয়া আমার বোধ হইল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল সোসাইটীর ভাইস প্রেসিডেণ্ট নির্বাচিত হইলাম এবং প্রেসিডেণ্টের (অধ্যাপক ক্রাম ব্রাউন) অনুপস্থিতিতে সভায় আমিই সভাপতির আসন গ্রহণ করিতাম।[] আমার ছয়মাস পূর্বে ওয়াকার “ডক্টর’ উপাধি পাইয়াছিলেন। তিনি তখন হইতেই ফিজিক্যাল কেমিষ্ট্রির প্রতি আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। ঐ বিজ্ঞানের তখন কেবল চর্চা সুরু হইয়াছিল। ওয়াকার জার্মানীতে গিয়া ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির তিনজন প্রবর্তকের অন্যতম অস্‌টোয়াল্ডের নিকট অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। উক্ত বিজ্ঞানের অন্য দুইজন প্রবর্তকের নাম,—ভাণ্ট হফ এবং আরেনিয়াস্। জার্মানী হইতে প্রত্যাগমন করিয়া তিনি ইংলণ্ডে ফিজিক্যাল কেমিষ্টি চর্চার প্রধান প্রবর্তক হইয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। গ্লাসগোর অধ্যাপক ডিট্‌মার, এক সময়ে ক্রাম ব্রাউনের সহকারী ছিলেন। তিনি আমাদের লেবরীটরী পরিদর্শন করিতে প্রায়ই আসিতেন। আমি তাঁহাকে একবার জিজ্ঞাসা করি, আমিও ফিজিক্যাল কেমিষ্ট্রির চর্চা আরম্ভ করিব কি না? ডিট্‌মার উত্তর দেন—“আগে কেমিক্যাল কেমিষ্ট হও!”


  1. সেসন ১৮৮৭-৮৮

    এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল সোসাইটির কর্মাধ্যক্ষগণ

    প্রেসিডেণ্ট—প্রোঃ এ, ক্রাম ব্রাউন, এফ, আর, এস।
    ভাইস প্রেসিডেণ্ট—পি, সি, রায় ডি, এস-সি; র‍্যাল্‌ফ্ স্টকম্যান এম, ডি।
    সেক্রেটারী—অ্যানড্রু, কিং। কোষাধ্যক্ষ—হিউম্যারশাল বি, এস সি।
    লাইব্রেরিয়ান—লিওনার্ড ভাবিন, পি-এইচ, ডি, এফ, আর, এম, ই, এফ, আই, সি।
    কমিটির সদস্যগণ—টি, এফ, বারব্যুর; ডি, বি, ডট্, এফ, আর, এস, ই; এফ, মেটল্যাণ্ড গিবসন; জে; গিবসন পি-এইচ, ডি, এফ, আর, এস, ই, এফ, আই, সি, এ, শ্যাণ্ড।