ঐ দিন আসিবার পথে আমি কখনই বাধা দিব না বা উহাকে বিলম্বিত করিব না। যখন ঐ দিন আসিবে তখন উহা ব্রিটিশ ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় দিবস বলিয়া গণ্য হইবে।”
দই হইতে সর তুলিয়া লইলে তাহা যেমন খেলো জিনিষ হইয়া পড়ে, সেইরূপ মেকলের সদিচ্ছাপূর্ণ বক্তৃতাও ইণ্ডিয়া আফিস ও আমলাতন্ত্রের দপ্তরের মধ্যে কেবল মাত্র শূন্য প্রতিধ্বনিতে পরিণত হইয়াছে। ভারতের কবি-বড়লাট লর্ড লিটন তাঁহার প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক পিতার বহু গুণ পাইয়াছিলেন। লর্ড লিটন অত্যন্ত খোলাখুলি ভাবেই ভারত সচিবকে এ বিষয়ে লিখিয়াছিলেন। ফলে একটা আপোস হয় এবং তাহার ফলেই “স্ট্যাটুটরী সিভিল সার্ভিসের” সৃষ্টি হয়।[১]
যোগ্যতা-সম্পন্ন এবং আভিজাত্য-পন্থী ভারতীয়দিগকে “স্ট্যাটুটরী” সিভিল সার্ভিসে লওয়া হইল, তবে সর্ত থাকিল যে তাহারা আসল সিভিল সার্ভিসের গ্রেডের তিন ভাগের দুই ভাগ বেতন পাইবে। বিলাতে যে প্রতিযোগিতা পরীক্ষা হইবে, তাহা কেবল ব্রিটিশদের জন্য (আইরিশরাও তাহার অন্তর্ভুক্ত) উন্মুক্ত থাকিবে। শিক্ষা-বিভাগেও এই নিয়ম প্রবেশ করিল। আমার তিন বৎসর পূর্বে জগদীশচন্দ্র বসু বিলাত হইতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি লণ্ডন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমধিক কৃতিত্বের পরিচয় দিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহাকেও স্বদেশে শিক্ষাবিভাগে উচ্চতর পদ লাভের চেষ্টায় পদে পদে বাধা পাইতে হইয়াছিল। শেষে তাঁহাকে এই সর্তে উচ্চতর বিভাগে লওয়া হইল যে তিনি—ঐ ‘গ্রেডের’ পূরা বেতন দাবী করিতে পারিবেন না। মাত্র তাহার দুই তৃতীয়াংশ পাইবেন। সবে দুই একটি ক্ষেত্রে ভারতবাসীরা উচ্চতর সার্ভিসে প্রবেশ করিতে পারিয়াছেন, কিন্তু তাহার দ্বারা অবস্থাটা আরও বিসদৃশ হইয়া উঠিয়াছে। সাধারণতঃ যোগ্য ভারতবাসীরাও সার্ভিসের নিম্নস্তরে মাত্র প্রবেশ করিতে পারিতেন। এই ভাবে ভারতীয়গণকে উচ্চতর পদ হইতে বঞ্চিত করাতে ভারতে এবং ভারতবন্ধু ইংরাজগণ কর্তৃক ব্রিটিশ পার্লামেণ্টে আলোচনা হইতে লাগিল এবং তাহার কিছু ফলও হইল। লর্ড ডফরিনের গবর্ণমেণ্ট ভারত সচিবের পরামর্শে একটা “পাবলিক সার্ভিস কমিশন” নিযুক্ত করিলেন। এই কমিশনের উদ্দেশ্য, ভারতবাসীদিগকে কি ভাবে সরকারী কার্যে অধিকতর সংখ্যায় গ্রহণ করা যায়, তাহার উপায় নির্ধারণ করা। কমিশন যে সিদ্ধান্ত করিলেন তাহা কতকটা পূর্বতন নীতির সহিত আপোস রফা। ভারতবাসীদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করিবার জন্য যাহাই করা যাক না কেন, প্রভু জাতির স্বার্থ ও সুবিধা যাহাতে অব্যাহত থাকে তাহা সর্বাগ্রে দেখিতে হইবে। “ইম্পিরিয়াল” ও “প্রভিন্সিয়াল” এই দুই শ্রেণীর পদের সৃষ্টি হইল,—প্রথম শ্রেণীর পদ ব্রিটিশদের জন্য এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ ভারতীয়দের জন্য। ইম্পিরিয়াল সার্ভিসের বেতনের পরিমাণ কার্যত প্রভিন্সিয়াল সার্ভিসের দ্বিগুণ করা হইল।
১৮৮৮ সালের আগষ্ট হইতে ১৮৮৯ সালের জুনের শেষ পর্যন্ত আমার কোন কাজ ছিল না। ঐ সময় আমার বড় অস্বস্তি বোধ হইয়াছিল। আমি টনীকে বলিয়াছিলাম, শ্যামসনের চুলের অভাবে যে দশা হইয়াছিল, লেবরেটরি না থাকিলে রসায়নবিদেরও ঠিক সেই দশা হয়, তাহার কোনই ক্ষমতা থাকে না। এই সময়ে আমি প্রায়ই ডাঃ জগদীশচন্দ্র বসু এবং তাঁহার পত্নীর আতিথ্য গ্রহণ করিতাম। রসায়ন শাস্ত্র ও উদ্ভিদবিদ্যা চর্চ্চা
- ↑ লর্ড লিটন ‘স্ট্যাটুটরী সিভিল সার্ভিস’ প্রবর্তনের কারণ প্রদর্শন করিয়া ভারতসচিবকে এই পত্র লিখেন।