পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্য একখানি খড়ো বাড়ী ঠিক করিলেন; উহার জরাজীর্ণ অবস্থা। পবে একজন বাগিচাওয়ালা ঐ বাড়ীতে থাকিতেন। কিন্তু আমি ঐ বাড়ী পাইয়া খাব খসী হইলাম। কেননা উহার চারিদিকে উন্মন্ত প্রান্তর ও শস্যক্ষেত্র। রাজনারায়ণ বসু তখন দেওঘর ‘বাসীদের মধ্যে সবাপেক্ষা প্রসিদ্ধ। সহস্ৰ সহস্ৰ যাত্রী এই পথে বৈদ্যুনাথের মন্দিরে মহাদেবকে দশন করিতে ষাইত। শিক্ষিত বাঙালীদের নিকট দেওঘরও এক প্রকার তীর্থক্ষেত্র ছিল। তাঁহারা সাধ রাজনারায়ণ বসকে দশন ও তাঁহার সম্পা লাভ করিতে আসিতেন। রাজনারায়ণ পারিবারিক জীবনে শোক পাইয়াছিলেন। বয়সেও তিনি অতি বন্ধ হইয়া পড়িয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার কথাবাতা সরস ও বিবিধ জ্ঞানের ভাণ্ডার স্বরুপ ছিল। আমাদের বন্ধ হেরবচন্দ্র মৈত্র দেওঘরে আসিয়া শীঘ্রই আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন। দেওঘর স্কুলের হেড মাস্টার যোগেন্দ্রনাথ বস আর একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তখন মধ্যসদন দত্তের জীবনচরিতের উপাদান সংগ্রহ করিতেছিলেন। এই অ-পর্ব জীবনচরিত পরে তাঁহাকে বাংলা সাহিত্যে প্রসিদ্ধ করিয়াছে। রাজনারায়ণ ও মধ্যসদনের মধ্যে যে সব পত্র ব্যবহার হইয়াছিল, জীবনচরিতের তাহা একটা প্রধান অংশ। রাজনারায়ণ বাব এগুলি চরিতকার যোগেন্দ্রবাবকে দিয়াছিলেন। ঐ সময়ে শিশিরকুমার ঘোষও তাঁহার বাংলোতে বাস করিতেছিলেন। তিনি অমতবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় দায়িত্ব হইতে সে সময় বস্তুত অবসর গ্রহণ করিয়াছিলেন। সতরাং আমি সংসঙ্গ লাভ করিলাম। আমরা সকলে মিলিয়া নিকটবতী পাহাড়গুলিতে বেড়াইতে যাইতাম। যোগেন্দ্রনাথ বস তাঁহার মধ্যসদন দত্তের জীবনচরিতের পাণ্ডুলিপি হইতে অনেক সময় আমাকে পড়িয়া শনাইতেন। এখানে একটী করণ রস মিশ্রিত কৌতুককর ঘটনার উল্লেখ করা যাইতে পারে। দেওঘরের সবত্র “ভেলার” গাছ। একদিন আমি ঐ গাছের একটী ফল চিবাইয়া খাইলাম। উদ্ভিদ তত্ত্ব অনুসারে ভেলা আমের জাতীয়, সতরাং আমি উহাকে অনিষ্টকর মনে করি নাই। তখনই আমার কিছ হইল না। কিন্তু পরদিন আমার মুখ খাব ফলিয়া গেল, এমন কি চোখ পর্যন্ত ঢাকা পড়িল। বন্ধরো বিষম শঙ্কিত হইলেন। স্থানীয় চিকিৎসক আমাকে বেলেডোনা ঔষধের প্রলেপ দিলেন। তাহাতেই আমি ভাল হইলাম। এক পযর্ণয়ের উদ্ভিদের মধ্যে অনেক সময় নিদোষ ও অনিষ্টকর দই রকমই থাকে, সে কথা আমার স্মরণ থাকা উচিত ছিল। যথা, আলম, বেগন, লঙ্কা, বেলেডোনা প্রভৃতি একই উদ্ভিদ পর্যায়ের অন্তগত । - هجـ পজার ছটাঁর পর আমি সহরে ফিরিলাম। ইহার এক বৎসর পাবে আমি ১১ নং অপার সাকুলার রোডের বাড়ী ভাড়া করিয়াছিলাম। পরবতী ২৫ বৎসর উহাই আমার বাসস্থান ছিল। এইখানেই বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যাপড ফামাসিউটিক্যাল ওয়াকসের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্সি কলেজে কাজ আরম্ভ করিবার কিছ দিন পর হইতেই বিজ্ঞান বিভাগে বাংলা সাহিত্যের দারিদ্র্য দেখিয়া আমার মন বিচলিত হয় এবং রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা এবং প্রাণিবিদ্যা সম্বন্ধে প্রাথমিক পুস্তিকা লিখিবার আমি সকল্প করি। স্বভাবত প্রথমেই রসায়ন শাস্য সম্বন্ধে পুস্তক লিখিতে আমি প্রবত্ত হইলাম। কিন্তু কিছদর পর্যন্ত বইখানি লিখিয়া আমি উহা হইতে বিরত হইলাম। আমার মনে হইল প্রাকৃতিক বিষয় অধ্যয়নই বালক বালিকাদের চিত্ত বেশী আকষণ করিবে এবং প্রাণিজগৎ ও উদ্ভিদজগৎ এই আলোচনার বিপলক্ষেত্র। জীৱজন্তুর গল্প, তাহাদের জীবনযাপন প্রণালী, স্বভাব, বিশেষত্ব, এই সমস্ত বালক বালিকাদের মন মাখ করে। ইংরাজীতে এক একটী জীব-গোষ্ঠী সম্বন্ধেই অনেক গ্রন্থ আছে। দন্টান্ত স্বরপ বানর পরিবারের অস্তগত গরিলা, শিম্পাঞ্জি, ওরাং আউটাং প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়। ঐ সমস্ত গ্রন্থই প্রত্যক্ষজ্ঞানলব্ধ তথ্য লইয়া