পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিখিত। কৃত্রিম উপায়ে অকিডের প্রজনন সাধন (fertilization) প্রভৃতির কৌশলময় বৈচিত্র্য দেখিয়া মন বিস্ময় ও আনন্দে পণ হয়। কাঁটের রপোন্তর জীবজগতের একটী বিসময়কর ব্যাপার। এখানে সত্য ঘটনা গল্পের চেয়েও মনোমধকর। বাংলা দেশ প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ঐশ্বষে পরিপণ। বক্ষলতা এখানে প্রাচুষের গৌরবে ভরপর। ইলেণ্ডে প্রকৃতি কঠোর, রক্ষ, তুহিনাচ্ছন্ন, কিন্তু বাংলা দেশে শীতকালেও প্রকৃতি তাহার ঐশ্ববয্যের মহিমায় বিকশিত হয়। শীতপ্রধান দেশে গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ার বক্ষলতার জীবন্ত নমনা সংগ্রহ করা কি কঠিন ব্যাপার। ইহাদিগকে বাঁচাইয়া রাখিবার জন্য কনজারভেটরী বা রক্ষণাগার প্রভৃতির ব্যবস্থা করিতে হয়। ইহার প্রমাণ একবার কিউ গাডেনে গেলেই দেখা যায়। আর বাংলাদেশে প্রকৃতি মন্তহস্ত হইয়া তাহার অজস্র দান চারিদিকে বিতরণ করে। কলিকাতা ছাড়িয়া দিলে, বাংলার সমস্ত স্থানই গ্রাম এবং যাহারা এই কলিকাতা সহরে বাস করে, তাহারা মাণিকতঙ্গার সেতু পার হইলে বা গঙ্গা পার হইয়া শিবপরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে গেলেই ইচ্ছামত বাক্ষলতার নমনা সংগ্রহ করিতে পারে। বাংলার নদীসমুহ বিচিত্র প্রকারের মৎস্যে পণ এবং বনজঙ্গলে বিচিত্র রকমের জীবজন্তুর বাস। এক কথায়—সমস্ত বাংলা দেশটাই একটা বীক্ষণাগার বিশেষ। তরণবয়স্কদিগকে প্রাথমিক বিজ্ঞান শিক্ষা দিবার একটা প্রধান উদ্দেশ্য, তাহাদের অন্তনিহিত পর্যবেক্ষণ শক্তিকে উদ্বোধিত করা এবং বাক্ষলতা ও জীবজন্তুর জীবন ইতিহাসের মধ্য দিয়া যে শিক্ষা পাওয়া যায়, তাহাতে এই উদ্দেশ্য সন্দেররাপে সিদ্ধ হয়। বাহা আকার প্রকারে কুকুর হইতে বিড়ালের পাথক্য কি ? আর একটা ভিতরে তলাইয়া এই দই প্রাণীর নখ, দাঁত প্রভৃতি পরীক্ষা করা যাক। আরও ভিতরে নামিয়া তাহাদের স্বভাব ও অভ্যাস, মুখভঙ্গীর বৈশিষ্ট্য, থাবা প্রভৃতি পরীক্ষা করা যাইতে পারে, যথা রন্ধনশালায় দধের সর, মাছভাজা, প্রভৃতি রাখিয়া পোষা বিড়ালকেও কি বিশ্বাস করা যায় ? এইদিকে আরও অনেক আলোচনা করা যাইতে পারে। বিড়াল ও কুকুর পর্যায়ের যে সব মাংসাশী প্রাণী বনে থাকে তাহদের আকৃতি প্রকৃতি, কোন কোন অঞ্চলে তাহাদের বাস ইত্যাদি। মোট কথা, জীবজন্তুর কাহিনী তরণবয়স্কদের চিত্ত সহজেই অধিকার করে এবং সচিত্র প্রাণিবিজ্ঞানের বহি তাহাদের নিকট গল্পের চেয়েও মনোরম। এই সব কথা ভাবিয়া বাংলাভাষায় প্রাণিবিজ্ঞান সম্পবন্ধে আমি একখানি প্রাথমিক গ্রন্থ লিখি। বি, এস-সি, পড়িবার সময় আমি এই বিজ্ঞান সম্বমেধ যাহা শিখিয়াছিলাম তাহা কাজে লাগিল, কিন্তু এবিষয়ে আরও আমাকে পড়িতে হইল। প্রাণিবিজ্ঞান সম্বন্ধে আমি বহল প্রামাণিক গ্রন্থ অধ্যয়ন করিলাম এবং জীবজন্তুদের কার্যকলাপ ও অস্থিসংস্থান পর্যবেক্ষণ করিবার জন্য প্রায়ই পশশালা এবং যাদুঘরে যাইতাম। আমার বন্ধ নীলরতন সরকার এবং প্রাণকৃষ্ণ আচাষ তখন নতন ডাক্তারী পাশ করিয়াছেন। তাঁহাদের সাহায্যে আমি কয়েকটি প্রাণীর দেহব্যবচ্ছেদও করিলাম। আমার স্মরণ আছে, একদিন প্রাতভ্রমণের সময় আমি একটি ‘ভাম’ (Indian Palm Civet) রাস্তার ধারে দেখিতে পাইলাম। বোধ হয় সহরের প্রান্তভাগে কোন বাড়ীতে নিশীথ অভিযান করিতে গিয়া সে নিহত হইয়াছিল। আমি এই “নমনাটি” সংগ্রহ করিয়া বিজয়গৌরবে বাড়ী লইয়া গেলাম এবং তৎক্ষণাৎ আমার পবোক ডাক্তার বন্ধবেয়কে উহা ব্যবচ্ছেদ করিবার জন্য নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠাইলাম। আমরা একটি “নেচার ক্লাব"ও খলিলাম। ডাক্তার নীলরতন সরকার এবং ভী: প্রাপকক আচাব ব্যতীত রামরহম সানাল (আলিপর পশশালার সপোরিনটেণ্ডেণ্ট), প্রসিপাল হেরবচন্দ্র মৈত্র এবং ডাঃ বিপিনবিহারী সরকার ঐ ক্লাবের সদস্য ছিলেন। আমরা মাসে একবার করিয়া সভা করিতাম। গ্রীষ্মের ছটাঁতে গ্রামের বাড়ীতে গিয়া