পাতা:আত্মচরিত (সিগনেট প্রেস) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাগিল। অবশেষে তাঁহারা আমাকে কিছ বলিবার জন্য অনরোধ করিলেন। আমি বলিলাম, “তোমরা মাখে ‘সারাপান নিবারণ’ ‘সিরাপান নিবারণ' বলিতেছ; আমি তো দেখি, তোমরা সারা সাগরে নিমগন আছ। তোমাদের রাস্তার মধ্যে শাড়ীর বাড়ি সব শ্রেষ্ঠ বাড়ি। সেটা যেন সাধারণ মানষের বৈঠকখানা, ভদ্রলোক সেখানে প্রবেশ করিতে লজা পায় না। কিন্তু আমাদের দেশে ভদ্রলোক কখনও শাড়ীর দোকানে প্রবেশ করে না, ছোটলোকেরাই প্রবেশ করে। আমি সেই দেশ হইতে আসিয়াছি, যে দেশের পবর্ণপরিষগণ সরোপানকে মহাপাতকের মধ্যে গণ্য করিয়াছিলেন।” এই বলিয়া মনাের “ব্রহমহত্যা সারাপানং স্তেয়ং” প্রভৃতি বচন উদ্ধত করিলাম। আর একটি বচন উদ্ধত করিয়া দেখাইলাম যে, সেই পবর্ণপরিষগণ আদেশ করিয়াছেন যে, মত্ত হস্তীতে তাড়া করিলে বরং হস্তীর পদতলে পড়িয়া মরিবে, তথাপি শান্ডিকালয়ে আশ্রয় লইবে না। এই সমস্ত বচন শনিয়া উপস্থিত পরিষ ও মহিলাগণ হাঁ করিয়া রহিলেন, ও পরস্পর মািখ দেখাদেখি করিতে লাগিলেন। যখন আমি বলিলাম যে, “আমাদের দেশে এরাপ লক্ষ-লক্ষ পরিবার আছে, যথা আমার নিজের পরিবার, যাহারা চৌদন্দ পােরষের মধ্যে কোনো প্রকার মদ্য দেখে নাই; এরােপ দেশে তোমাদের গবর্ণমেণ্টের অধীনে প্রকারান্তরে সরোপানের প্রশ্রয় দেওয়া হইতেছে, এবং হাজার হাজার সারার দোকান সথাপিত হইতেছে,” তখন চারিদিকে সেম! সেম! (কি লজজা ! কি লজজা () শবদ উঠিতে লাগিল। দলটি লোকের খপরে। একদিন উত্তর লন্ডনে আমার বাসা হইতে কুমারী কলেটের বাড়ি যাইব বলিয়া বাহির হইয়াছি, পথে একটা লোক একখানা মাদ্রিত কাগজ লইয়া আমার নিকট আসিয়া বলিল, “আমাক জাহাজ সমন্দ্রে মগন হইয়াছে, ইহাতে তাহার বিবরণ আছে; আপনি নেবেন?” আমি বলিলাম, “আমি সংবাদপত্রে ঐ জাহাজ ডোবার বিবরণ পড়েছি।” তখন সে আপনার দারিদ্র্যের বিবরণ দিতে প্রবত্ত হইল; অনাহারে যায়; আপনি যদি কিছ সাহায্য করেন, বড় ভালো হয়।” তাহার কথা শনিয়া আমার বড় দঃখ হইল, কিছ দান করিতে ইচ্ছা হইল; কিন্তু তাহার মাখে মদের গন্ধ পাইলাম। তখন তাহাকে বলিলাম, “তোমাকে কিছু সাহায্য করিতে ইচ্ছা! হইতেছে, করিতেও পারি; কিন্তু তোমাদের জাত বড় মাতাল, তোমাকে যে পয়সা দিব, তাহা হয়তো তোমার সন্ত্রীর হাতে না গিয়া শাড়ীর হাতে যাবে। এই জন্য দিতে ইচ্ছা করে না।” সে ব্যক্তি বলিল, “এই রাস্তার আদরে এক গলিতে আমি থাকি, আপনি আমার বাড়িতে আমার সন্ত্রীর কাছে চলন, তাকে জিজ্ঞাসা করিলে সব কথা জানিতে পরিবেন।” আমি পাবেই সংবাদপত্রে পড়িয়াছিলাম যে, লন্ডনের ঐ উত্তরপাব ভাগে অনেক দন্ট লোকের বাস, সব দাই চুরি ডাকাতি হত্যা মারামারি প্রভৃতি হইয়া থাকে, সময় সময় পথিকদিগকে ভুলাইয়া গলির ভিতর লইয়া সবসব কাড়িয়া লয়, এবং চোখে কাপড় বধিয়া নানা গলি ঘরাইয়া আর এক পথে ছাড়িয়া দেয়। তখন দয়ার আবিভাবে সে কথা আমার সমরণ হইল না। আমি তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলাম। সে আমাকে গলি হইতে গলির ভিতর লইয়া চলিল। অবশেষে আমাকে একটা বাড়িতে এক ঘরের ভিতর পরিয়া বলিল, “আমার সত্রী ঘরে নাই; এখানে বসন, আমি তাকে ডেকে আনছি।” এই বলিয়া বাহির হইয়া গেল। আমার তখনো খেয়াল নাই যে বিপৎসঙ্কুল স্থানে আসিয়াছি। তখনো তাহার সন্ত্রীর সহিত কথা r