পাতা:আত্মজীবনী ও স্মৃতি-তর্পন - জলধর সেন.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R আত্মজীবনী ও স্মৃতি-তৰ্পণ কোন হ্যায়।” . আমি তাড়াতাড়ি জবাব দিলুম ‘আমি মথর কুণ্ডু হয়।” তখন আবার প্রশ্ন হাে’’ল ‘ক্যােয়া মাংতা।’ আমি বললুম, “লাট সাহেব মাংতা ।” এই বলেই কোন আদেশের অপেক্ষা না ক’রে এক লাফে ধুয়োকলের ওপর চড়লুম। তঞ্চন একজন সাহেব ধুয়োকলের একটা কামরা থেকে বার হয়ে এলেন । আমি চেয়ে দেখলুম, তার একখানা হাত কাটা । তখনই বুঝলুম ইনিই লাট সাহেব । আমি হঁটুি পেতে বসে দু'হাত তুলে তাকে সেলাম করলুম। লাটসাহেব ইংরাজীতে আমায় কি জিজ্ঞাসা করলেন। আমি উত্তর দিলুম-‘হুজুর নো ইংলিস।’ লাট সাহেব হেসে পাশের একজনকে কি বললেন । সে সাহেবটি বাঙ্গলা জানতেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি চাও তুমি ? আমি তাকে বললুমআমার নাম মঙ্গর কুণ্ডু, এই পাশের কুমারখালি গ্রামে আমার বাস। আমি নিজের জন্য কিছুই চাই না । আমার গ্রামের ছেলেরা ইংরেজি শিখতে পায় না, সেইজন্যে এক ইংরেজী স্কুল বসিয়েছি। লাট সাহেবকে সেই স্কুলে পায়ের ধূলো দিতে হবে।” সাহেবটি লাট সাহেবকে আমার প্রার্থনা জানালেন, লাট সাহেব হেসে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন-‘ওয়েল কুণ্ডু, আই উইল গো নাউ।” তখন আর কি, লাট সাহেব ও তার সঙ্গে পাচ ছ’জন সাহেব আমার নৌকায় উঠলেন। নৌকা এসে স্কুলের ঘাটে লাগল। সাহেব স্কুল দেখে খুশী হলেন । হেডমাষ্টার ক্লষ্ণধন মজুমদারের সঙ্গে কথা বলে আরও খুশী হলেন। তারপর বললেন, আমি কলকাতায় ফিরে গিয়ে তোমার স্কুলের জন্যে যা করতে হয় করবো ।” তখনও গভর্ণমেণ্ট মফঃস্বলের স্কুলের জন্যে কোন ব্যবস্থাই করেননি । লর্ড হার্ডিঞ্জ তার কথা রক্ষা করে গিয়েছিলেন । তিনি দেশে ফিরে যাবার সময় আমার স্কুলের কথা ভাল করে লিখে রেখে গিয়েছিলেন। সেই জন্যেই লর্ড ডালহৌসির সময়ে যখন প্রথম মফঃস্বলের স্কুলে সাহায্য দেবার প্রথার প্রবর্তন হয়, তপন আমার স্কুলই প্রথম সাহায্য পেয়েছিল। আমার স্কুল দেখে লাট সাহেব ষেই ষ্টীমারে যেতে প্রস্তুত হলেন, তপন আমি হাত যোড করে বলুম-‘হুজুর একটু জলযোগ করতে হবে।” কৃষ্ণধনবাবু সেই কথা লাট সাহেবকে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি বললেন- ‘অল রাইট ।” পাশের একটা ঘরেই টেবিলে নানারকম অন্নব্যঞ্জন, পায়স, পিষ্টক, মিষ্টান্ন সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। লাটসাহেব ও সঙ্গীরা এই আয়োজন দেখে মহা খুলী হলেন । যার যা ইচ্ছা খেতে লাগলেন। একটা জিনিষ। লাট সাহেবের বড়ই মুখপ্রিয় হয়েছিল। একখানা থালাতে পোস্ত দিয়ে বকফুল ভেজে রাখা হয়েছিল। লাটসাহেব তুর তিনচারটে খেয়ে ভারী খুলী ।