পাতা:আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিত্য পূর্ণ করবার আবেগ আমি অনুভব করেছি। এ দেখা তো নিষ্ক্রিয় আলস্যপরতা নয়। এই দেখা এবং দেখানাের তালে তালেই সৃষ্টি।

 ঋগ্‌বেদে একটি আশ্চর্য বচন আছে―

 অভ্রাতৃব্যো অনাত্বমনাপিরিন্দ্র জনুষা সনাদসি। যুধেদাপিত্বমিচ্ছসে। হে ইন্দ্র, তোমার শত্রু নেই, তােমার নায়ক নেই, তােমার বন্ধু নেই, তবু প্রকাশ হবার কালে যােগের দ্বারা বন্ধুত্ব ইচ্ছা কর।

 যত বড়ো ক্ষমতাশালী হােন-না কেন সত্যভাবে প্রকাশ পেতে হলে বন্ধুতা চাই, আপনাকে ভালো লাগানো চাই। ভালাে লাগাবার জন্য নিখিল বিশ্বে তাই তো এত অসংখ্য আয়ােজন। তাই তাে শব্দের থেকে গান জাগছে, রেখার থেকে রূপের অপরূপতা। সে যে কী আশ্চর্য সে আমরা ভুলে থাকি।

 এ কথা বলব, সৃষ্টিতে আমার ডাক পড়েছে এইখানেই, এই সংসারের অনাবশ্যক মহলে। ইন্দ্রের সঙ্গে আমি যােগ ঘটাতে এসেছি যে যোগ বন্ধুত্বের যোগ। জীবনের প্রয়ােজন আছে অন্নে বস্ত্রে বাসস্থানে, প্রয়োজন নেই আনন্দরূপে অমৃতরূপে। সেইখানে জায়গা নেয় ইন্দ্রের সখারা।

অন্তি সন্তং ন জহাতি
অন্তি সন্তং ন পশ্যতি।
দেবশ্য পশ্য কাব্যং
ন মমার ন জীর্যতি।

কাছে আছেন তাঁকে ছাড়া যায় না, কাছে আছেন তাঁকে দেখা যায় না, কিন্তু দেখা সেই দেবের কাব্য; সে কাব্য মরে না, জীর্ণ হয় না।

 জন্তুদের উপর সৃষ্টিকর্তার ক্রিয়া অব্যবহিত। তার থেকে তারা সরে এসে তাঁকে দেখতে পায় না। কেবলমাত্র নিয়মের সম্বন্ধে মানুষের সঙ্গে তাঁর যদি সম্বন্ধ হত, তা হলে সেই জন্তুদের মতােই কেবল অপরিহার্য

১০১