পাতা:আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়েছে, মূঢ়ের মতাে তাকে উচ্ছৃঙ্খল কল্পনায় বিকৃত করে দেখি নি; কিন্তু এই-সমস্ত ব্যবহারের মাঝখান দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে আমার মন যুক্ত হয়ে চলে গেছে সেইখানে যেখানে সৃষ্টি গেছে সৃষ্টির অতীতে। এই যােগে সার্থক হয়েছে আমার জীবন।

একদিন আমি বলেছিলুম―

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।

 ঋগ্‌বেদের কবি বলেছেন

অসুনীতে পুনরম্মাসু চক্ষুঃ
পুনঃ প্রাণমিহ নো ধেহি ভােগম্।
জ্যোক্ পশ্যেম সূর্যমুচ্চরন্তম্
অনুমতে মৃড়য়া নঃ স্বস্তি।

প্রাণের নেতা আমাকে আবার চক্ষু দিয়ো, আবার দিয়ো প্রাণ, দিয়াে ভোগ, উচ্চরন্ত সূর্যকে আমি সর্বদা দেখব, আমাকে স্বস্তি দিয়ো।

 এই তো বন্ধুর কথা, বন্ধুর প্রকাশ ভালাে লেগেছে। এর চেয়ে স্তবগান কি আর-কিছু আছে? দেবস্য পশ্য কাব্যম্। মন বলছে কাব্যকে দেখাে, এ দেখার অন্ত চিন্তা করা যায় না।

 এখানে এই প্রশ্ন উঠতে পারে, তাঁর সঙ্গে কি আমার কর্মের যােগ হয় নি।

 হয়েছে, তার প্রমাণ আছে। কিন্তু সে লােহালক্কড়ে বাঁধা যন্ত্রশালার কর্ম নয়। কর্মরূপে সেও কাব্য। একদিন শান্তিনিকেতনে আমি যে শিক্ষাদানের ব্রত নিয়েছিলুম তার সৃষ্টিক্ষেত্র ছিল বিধাতার কাব্যক্ষেত্রে; আহ্বান করেছিলুম এখানকার জল স্থল আকাশের সহযােগিতা। জ্ঞানসাধনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলুম আনন্দের বেদীতে। ঋতুদের আগমনী গানে ছাত্রদের মনকে বিশ্বপ্রকৃতির উৎসবপ্রাঙ্গণে উদ্‌বােধিত করেছিলুম।

 এখানে প্রথম থেকেই বিরাজিত ছিল সৃষ্টির স্বত-উদ্ভাবনার তত্ত্ব।

১০৩