পাতা:আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাগানবাড়ির উপরিতলের খােলা ঘরটি যেখানে বাতাস আলো এবং বালকের কল্পনার পরস্পর অবাধ মেলামেশার মাঝখানে জনতার খ্যাতিনিন্দার কলরব আবর্ত তৈরি করে নি।

 মানুষের কাছ থেকে দরদ ও আদর পাবার লােভ আমার নেই। এ কথা বললে অত্যুক্তি করা হবে। মনে ভাবি, বিধাতার স্নেহের দান মানুষের সমাদর বেয়েই ঝরে আসে। যখন মানুষ বলে, তুমি যা দিয়েছ তাতে খুশি হয়েছি― তখন সেই খুশির কথাটা একটা মস্ত পুরস্কার। এ পুরস্কার চাই নে ব’লে স্পর্ধা করতে পারি নে।

 কিন্তু সংসারে যশের পুরস্কার বালকের জন্যে নয়, তার জন্যে মুক্তি। জনসভায় আসন বজায় রাখতে হলে তার উপযুক্ত সাজসজ্জা চাই, জনসভার দস্তুর বাঁচিয়ে চলবার আয়ােজন অনেক। বালকের বসন-ভূষণের বাহুল্য নেই, যেটুকু তার আছে তা যদি ছেঁড়া হয় বা তাতে ধুলাে লাগে তবু সেটা বেমানান হয় না। সার্কাসের খেলােয়াড়ের মতাে সে অন্যের জন্যে খেলে না, তার খেলা তার আপনারই জন্যে। এই কারণে তার খেলাতে কর্মের বাঁধন নেই, খেলাতে তার ছুটি। বিশ্বের মধ্যে যে চিরবালক জলে স্থলে আকাশে আলােতে ছায়াতে অবহেলায় খেলা করেন, যিনি সেই খেলার বদলে শিরােপা চান না, মর্তের বালক তাঁকে না চিনেও না জেনেও তাঁকেই পায় আপন খেলার সাথী, তাই দেশের লােকের কথায় তার কোনাে দরকার হয় না।

 কিন্তু বয়স্কের কীর্তি তো বালকের খেলার মতো নয়। বহুলােকের সঙ্গে তার বহুতর যােগ। এখানে বন্ধুকে না হলে চলে না, এখানে সহায়কে না পেলে ক্লান্তির ভারে পিঠের হাড় বেঁকে যায়। কাজের দিনে প্রাঙ্গণে ধুলােয় একলা বসে অকিঞ্চনের আয়ােজনে তার শক্তি পাওয়া যায় না, পাঁচজনকে ডাক দিতে হয়। বালককালে যেদিন চন্দননগরে এসেছিলেম সেদিন এসেছিলেম বিশ্বপ্রকৃতির খেলাঘরে! সেদিনকার দান

১১৭