পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সফলতার সদুপায়।
১১১

প্রবেশের জন্য দ্বারীর অনুমতির অপমান স্বীকার করিতে হয় না, ঈশ্বরের আদেশ শিরোধার্য্য করিয়া আসিতে হয়;—এখানে প্রবেশ করিতে গেলে মাথা নত করিতে হয় বটে, কিন্তু সে কেবল নিজের উচ্চ আদর্শের নিকট, দেশের নিকট, যিনি নতব্যক্তিকে উন্নত করিয়া দেন, সেই মঙ্গলবিধাতার নিকট। তোমাদিগকে আহ্বান করিয়া এ পর্য্যন্ত কেহ ত সম্পূর্ণ নিরাশ হন নাই;—দেশ যখন বিলাতি পিনাক বাজাইয়া ভিক্ষা করিতে বাহির হইয়াছিল, তখন তোমরা পশ্চাৎপদ হও নাই—প্রাচীন শ্লোকে যে স্থানটাকে শ্মশানের ঠিক পূর্ব্বেই বসাইয়াছেন, সেই রাজদ্বারে তোমরা যাত্রা করিয়া আপনাকে সার্থক জ্ঞান করিয়াছ—আর আজ সাহিত্যপরিষদ্ তোমাদিগকে যে আহ্বান করিতেছেন, তাহার ভাষা মাতৃভাষা ও তাহার কার্য্য মাতার অন্তঃপুরের কার্য্য বলিয়াই কি তাহা ব্যর্থ হইবে—সে আহ্বান দেশের “উৎসবে ব্যসনে চৈব,” কিন্তু “রাজদ্বারে শ্মশানে চ” নয় বলিয়াই কি তোমাদের উৎসাহ হইবে না?— সাহিত্যপরিষদে আমরা দেশকে জানিবার জন্য প্রবৃত্ত হইয়াছি—দেশের কাব্যে, গানে, ছড়ায়, প্রাচীন মন্দিরের ভগ্নাবশেষে, কীটদষ্ট পুঁথির জীর্ণপত্রে, গ্রাম্য পার্ব্বণে, ব্রতকথায়, পল্লীর কৃষিকুটীরে পরিষদ্ যেখানে স্বদেশকে সন্ধান করিবার জন্য উদ্যত হইয়াছেন, সেখানে বিদেশী লোকে কোনোদিন বিস্ময়দৃষ্টিপাত করে না, সেখান হইতে সংবাদপত্রবাহনখ্যাতি সমুদ্রপারে জয়ঘোষণা করিতে যায় না—সেখান তোমাদের কোনো প্রলোভন নাই—কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেহ মাতার নিঃশব্দ আশিষমাত্রকে যদি রাজমহিষীর ভোজ্যাবশেষের চেয়ে অধিক মনে করিতে পার, তবে মাতার নিভৃত অন্তঃপুরচারী এই সকল মাতৃসেবকদের পার্শ্বে আসিয়া দণ্ডায়মান হও এবং দিনের পর দিন বিনা বেতনে, বিনা পুরস্কারের খ্যাতিবিহীন কর্ম্মে স্বদেশপ্রেমকে সার্থক কর। তাহা হইলে অন্তত এইটুকু বুঝিবে যে,