পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
আত্মশক্তি।

যদি শক্তি থাকে তবে কর্ম্মও আছে, যদি প্রীতি থাকে তবে সেবার উপলক্ষ্যের অভাব নাই, সেজন্য গবর্মেণ্টের কোনো আইনপাসের অপেক্ষা করিতে হয় না এবং কোনো অধিকারভিক্ষার প্রত্যাশায় রুদ্ধদ্বারের কাছে অনন্যকর্ম্মা হইয়া দিনরাত্রি যাপন করা অত্যাবশ্যক নহে।

 আমার আশঙ্কা হইতেছে, অদ্যকার বক্তব্যবিষয়সম্বন্ধে আমি ঠিক মাত্রারক্ষা করিতে পারি নাই। কথাটা ত শুদ্ধমাত্র এই যে, দেশীভাষার ব্যাকরণ চর্চ্চা কর, অভিধান সঙ্কলন কর, পল্লী হইতে দেশের আভ্যন্তরিক বিবরণ সংগ্রহ কর। এই সামান্য প্রস্তাবের অবতারণার জন্য এমন করিয়া উচ্চভাবের দোহাই দিয়া দীর্ঘ ভূমিকা রচনা করা কিছু যেন অসঙ্গত হইয়াছে। হইয়াছে স্বীকার করি কিন্তু কালের গতিকে এইরূপ অসঙ্গত ব্যাপার আমাদের দেশে আবশ্যক হইয়া পড়িয়াছে, ইহাই আমাদের দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। যদি কোনো মাতার এমন অবস্থা হয় যে, ছেলের প্রতি তাঁহার কর্ত্তব্য কি, তাহাই নিরূপণ করিবার জন্য দেশবিদেশের বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্ম্মশাস্ত্র পড়িয়া তিনি কুলকিনারা পাইতেছেন না, তবে তাঁহাকে এই অত্যন্ত সহজ কথাটি যত্ন করিয়া বুঝাইতে হয়—আগে দেখ তোমার ছেলেটা কোথায় আছে, কি করিতেছে, সে পাতকুয়ার পড়িল, কি আল্‌পিন্‌ গিলিয়া বসিল, তাহার ক্ষুধা পাইয়াছে, কি শীত করিতেছে? এ সব কথা সাধারণত বলিতেই হয় না, কিন্তু যদি দুর্দ্দৈবক্রমে বিশেষস্থলে বলা আবশ্যক হইয়া পড়ে, তবে বাহুল্য করিয়াই বলিতে হয়। বর্ত্তমানকালে আমাদের দেশে যদি বলা যায় যে, দেশের জন্য বক্তৃতা কর, সভা কর, তর্ক কর, তবে তাহা সকলে অতি সহজেই বুঝিতে পারেন; কিন্তু যদি বলা হয়, দেশকে জান ও তাহার পরে স্বহস্তে যথাসাধ্য দেশের সেবা কর, তবে দেখিয়াছি, অর্থ বুঝিতে লোকের বিশেষ কষ্ট হয়। এমন অবস্থায় দেশের প্রতি কর্তবসম্বন্ধে