পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ।
১১৩

দুটো-একটা সামান্য কথা বলিতে যদি অসামান্য বাক্যব্যয় করিয়া থাকি, তরে মার্জ্জনা করিতে হইবে। বস্তুত সকালবেলায় যদি ঘন কুয়াশা হইয়া থাকে, তবে অধীর হইয়া ফল নাই এবং হতাশ হইবারও প্রয়োজন দেখি না—সূর্য্য সে কুয়াশা ভেদ করিবেনই এবং করিবামাত্র সমস্ত পরিষ্কার হইয়া যাইবে। আজ আমি অধীরভাবে অধিক আকাঙ্ক্ষা করিব না— অবিচলিত আশার সহিত, আনন্দের সহিত এই কথাই বলিব, নিবিড় কুজ্‌ঝটিকার মাঝে মাঝে ঐ যে বিচ্ছেদ দেখা যাইতেছে—সূর্য্যরশ্মির ছটা খরধার কৃপাণের মত আমাদের দৃষ্টির আবরণ তিনচারি জায়গায় ভেদ করিয়াছে—আর ভয় নাই—আমাদের রাজপথ গৃহদ্বারের সম্মুখেই অনতিবিলম্বে পরিস্ফুটরূপে প্রকাশিত হইয়া পড়িবে—তখন দিগ্বিদিক্ সম্বন্ধে দশজন মিলিয়া দশপ্রকারের মত লইয়া ঘরে বসিয়া বাদবিতণ্ডা করিতে হইবে না—তখন সকলে আপন-আপন শক্তি অনুসারে আপন-আপন পথ নির্ব্বাচন করিয়া তর্ক সভা হইতে, পুঁথির রুদ্ধকক্ষ হইতে বাহির হইয়া পড়িব—তখন নিকটের কাজকে দূর করিয়া মনে হইবে না এবং অত্যাবশ্যক কাজকে ক্ষুদ্র বলিয়া অবজ্ঞা জন্মিবে না। এই শুভক্ষণ আসিবে বলিয়া আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস আছে—সেইজন্য, পরিষদের অদ্যকার আহ্বান যদি তোমাদের অন্তরে স্থান না পায়, বাংলাদেশের ঘরের কথা জানাকে যদি তোমরা বেশি একটা কিছু বলিয়া না মনে কর— তবু আমি ক্ষুব্ধ হইব না এবং আমার যে মাতৃভূমি এতদিন তাঁহার সন্তানগণের গৃহপ্রত্যাগমনের জন্য অনিমেষদৃষ্টিতে প্রতীক্ষা করিয়া আছেন, তাঁহাকে আশ্বাস দিয়া বলিব, জননি, সময় নিকটবর্ত্তী হইয়াছে, ইস্কুলের ছুটি হইয়াছে, সভা ভাঙ্গিয়াছে, এইবার তোমার কুটীর প্রাঙ্গণের অভিমুখে তোমার ক্ষুধিত সন্তানদের পদধ্বনি ঐ শুনা যাইতেছে,—এখন বাজাও তোমার শঙ্খ, জ্বালো তোমার প্রদীপ—তোমার প্রসারিত শীতলপাটির উপরে আমাদের