পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতবর্ষীয় সমাজ।

সেতু বাঁধিতেছে—বর্ব্বর য়ুরোপ-বিচ্ছেদ, বিনাশ, ব্যবধান সৃজন করিতেছে, সম্প্রতি চীনে তাহার প্রমাণ পাওয়া গেছে। চীনে কেন, আমরা ভারতবর্ষে যুরোপের সভ্যতা ও বর্ব্বরতা উভয়েরই কাজ প্রত্যক্ষ করিতে পাই। সকল সভ্যতার মর্ম্মস্থলে মিলনের উচ্চ আদর্শ বিরাজ করিতেছে বলিয়াই, সেই আদর্শমূলে বিচার করিবার বর্ব্বরতার বিচ্ছেদ অভিঘাতগুলা দ্বিগুণ বেদনা ও অপমানের সহিত প্রত্যহ অনুভব করিয়া থাকি।

 এই লোকচিত্তের একতা সব দেশে একভাবে সাধিত হয় না। এইজন্য য়ুরোপীয়ের ঐক্য ও হিন্দুর ঐক্য এক প্রকারের নহে, কিন্তু তাই বলিয়া হিন্দুর মধ্যে যে একটা ঐক্য নাই, সে কথা বলা যায় না। সে ঐক্যকে ন্যাশনাল ঐক্য না বলিতে পার—কারণ নেশন ও ন্যাশনাল্ কথাটা আমাদের নহে, য়ুরোপীয় ভাবের দ্বারা তাহার অর্থ সীমাবদ্ধ হইয়াছে।

 প্রত্যেক জাতি নিজের বিশেষ ঐক্যকেই স্বভাবতঃ সব চেয়ে বড় মনে করে। যাহাতে তাহাকে আশ্রয় দিয়াছে ও বিরাট করিয়া তুলিয়াছে, তাহাকে সে মর্ম্মে মর্ম্মে বড় বলিয়া চিনিয়াছে, আর কোন আশ্রয়কে সে আশ্রয় বলিয়া অনুভব করে না। এইজন্য য়ুরোপের কাছে ন্যাশনাল্ ঐক্য অর্থাৎ রাষ্ট্রতন্ত্রমূলক ঐক্যই শ্রেষ্ঠ;—আমরাও য়ুরোপীয় গুরুর নিকট হইতে সেই কথা গ্রহণ করিয়া পূর্ব্বপুরুষদিগের ন্যাশনাল্ ভাবের অভাবে লজ্জা বোধ করিতেছি।

 সভ্যতার যে মহৎ গঠনকার্য্য—বিচিত্রকে এক করিয়া তোলা—হিন্দু তাহার কি করিয়াছে দেখিতে হইবে। এই এক করিবার শক্তি ও কার্য্যকে ন্যাশনাল্ নাম দাও বা যে কোন নাম দাও, তাহাতে কিছু আসে যায় না, মানুষবাঁধা লইয়াই বিষয়।

 নানা যুদ্ধবিগ্রহ-রক্তপাতের পর য়ুরোপের সভ্যতা যাহাদিগকে এক নেশনে বঁধিয়াছে, তাহারা সবর্ণ। ভাষা ও কাপড় এক হইয়া গেলেই