পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
আত্মশক্তি।

করিয়াই শিক্ষার ব্যবস্থা করিতে হইবে, রাজভক্তির ছাঁচে ঢালিয়া ইতিহাস রচিতে হইবে, বিজ্ঞানশিক্ষাটাকে পাকেপ্রকারে খর্ব্ব করিতে হইবে, ভারতবর্ষীয় ছাত্রের সর্ব্বপ্রকার আত্মগৌরববোধকে সঙ্কুচিত করিতে হইবে, তবে তাঁহাদিগকে দোষ দেওয়া যায় না—কর্ত্তার ইচ্ছা কর্ম্ম—আমরা সে কর্ম্মের ফলভোগ করিব, কিন্তু সে কর্ম্মের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার আশা করিব কিসের জোরে?

 তা ছাড়া, বিদ্যাজিনিষটা কলকারখানার সামগ্রী নহে। তাহা মনের ভিতর হইতে না দিলে দিবার জো নাই। লাট্‌সাহেব তাঁহার অক্‌স্‌ফোর্ড্—কেম্ব্রিজের আদর্শ লইয়া কেবলি আস্ফালন করিয়াছেন; এ কথা ভুলিয়াছেন যে, সেখানে ছাত্র ও অধ্যাপকের মধ্যে ব্যবধান নাই—সুতরাং সেখানে বিদ্যার আদান প্রদান স্বাভাবিক। শিক্ষক সেখানে বিদ্যাদানের জন্য উন্মুখ এবং ছাত্রেরাও বিদ্যালাভের জন্য প্রস্তুত— পরস্পরের মাঝখানে অপরিচয়ের দূরত্ব নাই, অশ্রদ্ধার কণ্টক-প্রাচীর নাই, কাজেই সেখানে মনের জিনিষ মনে গিয়া পৌঁছায়। পেড্‌লারের মত লোক আমাদের দেশের অধ্যাপক,— শিক্ষাবিভাগের অধ্যক্ষ, তিনি আমাদিগকে কি দিতে পারেন, আমরাই বা তাঁহার কাছ হইতে কি লইতে পারি! হৃদয়ে হৃদয়ে যেখানে স্পর্শ নাই, যেখানে সুস্পষ্ট বিরোধ ও বিদ্বেষ আছে; সেখানে দৈববিড়ম্বনায় যদি দানপ্রতিদানের সম্বন্ধ স্থাপিত হয়, তবে সে সম্বন্ধ হইতে শুধু নিষ্ফলতা নহে, কুফলতা প্রত্যাশা করা যায়।

 সর্ব্বাপেক্ষা এইজন্যই বিশেষ প্রয়োজন হইয়াছে—নিজেদের বিদ্যাদানের ব্যবস্থাভার নিজেরা গ্রহণ করা। তাহাতে আমাদের বিদ্যামন্দিরে কেম্ব্রিজ-অক্‌স্‌ফোর্ডের প্রকাণ্ড পাষাণ প্রতিরূপ প্রতিষ্ঠিত হইবে না জানি, তাহার সাজসরঞ্জাম দরিদ্রের উপযুক্ত হইবে, ধনীর চক্ষে তাহার অসম্পূর্ণতাও অনেক লক্ষিত হইবে, কিন্তু জাগ্রত সরস্বতী