পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুনিভার্সিটি বিল্।
১১৯

শ্রদ্ধাশতদলে আঁসীন হইবেন, তিনি জননীর মত করিয়া সন্তানদিগকে অমৃত পরিবেষণ করিবেন, ধনমদগর্ব্বিতা বণিক্‌গৃহিণীর মত উচ্চ বাতায়নে দাঁড়াইয়া দূর হইতে ভিক্ষুকবিদায় করিবেন না।

 পরের কাছ হইতে হৃদ্যতাবিহীন দান লইবার একটা মস্ত লাঞ্ছনা এই যে, গর্ব্বিত দাতা খুব বড় করিয়া খরচের হিসাব রাখে, তাহার পরে দুইবেলা খোঁটা দেয়—‘এত দিলাম তত দিলাম, কিন্তু ফলে কি হইল?’ মা স্তন্যদান করেন, খাতায় তাহার কোনো হিসাব রাখেন না, ছেলেও বেশ পুষ্ট হয়—স্নেহবিহীনা ধাত্রী বাজার হইতে খাবার কিনিয়া রোরুদ্যমান মুখের মধ্যে গুঁজিয়া দেয়, তাহার পরে অহরহ খিট্‌খিট করিতে থাকে—‘এত গেলাইতেছি, কিন্তু ছেলেটা দিন দিন কেবল কাঠি হইয়া যাইতেছে!’

 আনাদের ইংরাজ কর্ত্তৃপক্ষেরা সেই বুলি ধরিয়াছেন। পেড্‌লার সেদিন বলিয়াছেন, আমরা বিজ্ঞানচর্চ্চার এত বন্দোবস্ত করিয়া দিলাম, এত আনুকুল্য করিলাম, বৃত্তির টাকার এত অপব্যয় করিতেছি, কিন্তু ছাত্রেরা স্বাধীনবুদ্ধির কোনো পরিচয় দিতেছে না!

 অনুগ্রহজীবীদিগকে এই সব কথাই শুনিতে হয়— অথচ আমাদের বলিবার মুখ নাই। বন্দোবস্ত সমস্ত তোমাদেরই হাতে, এবং সে বন্দোবস্ত যদি যথেষ্ট ফললাভ না হয়, তাহার সমস্ত পাপ আমাদেরই। এদিকে খাতায় টাকার অঙ্কটাও গ্রেট্‌প্রাইমার অক্ষরে দেখান হইতেছে—যেন এত বিপুল টাকা এত-বড় প্রকাণ্ড অযোগ্যদের জন্য জগতে আর কোনো দাতাকর্ণ ব্যয় করে না—অতএব ইহার “moral” এই—হে অক্ষম, হে অকর্ম্মণ্য, তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তোমরা রাজভক্ত হও, তোমরা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে চাঁদা দিতে কপোলযুগ পাণ্ডুবর্ণ করিয়ো না!

 ইহাতে বিদ্যালাভ কতটুকু হয় জানি না, কিন্তু আত্মসম্মান থাকে