পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুনিভার্সিটি বিল্।
১২১

 যাহাতে আমাদের যথার্থ আত্মসম্মানবোধের উদ্রেক হয়, বিদেশীরা তাহা ইচ্ছাপূর্ব্বক করিবে না এবং সেজন্য আমরা যেন ক্ষোভ অনুভব না করি। যেখানে যাহা স্বভাবতই আশা করা যাইতে পারে না, সেথানে তাহা আশা করিতে যাওয়া মূঢ়তা—এবং সেখানে ব্যর্থমনোরথ হইয়া পুনঃপুন সেইখানেই ধাবিত হইতে যাওয়া যে কি, ভাষায় তাহার কোনো শব্দ নাই। এস্থলে আমাদের একমাত্র কর্ত্তব্য, নিজেরা সচেষ্ট হওয়া; আমাদের দেশে ডাক্তার জগদীশ বসু প্রভৃতির মত যে সকল প্রতিভাসম্পন্ন মনস্বী প্রতিকূলতার মধ্যে থাকিয়াও মাথা তুলিয়াছেন, তাঁহাদিগকে মুক্তি দিয়া তাঁহাদের হস্তে দেশের ছেলেদের মানুষ করিয়া তুলিবার স্বাধীন অবকাশ দেওয়া; অবজ্ঞা-অশ্রদ্ধা-অনাদরের হাত হইতে বিদ্যাকে উদ্ধার করিয়া দেবী সরস্বতীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা; জ্ঞানশিক্ষাকে স্বদেশের জিনিষ করিয়া দাঁড় করানো; আমাদের শক্তির সহিত, সাধনার সহিত, প্রকৃতির সহিত তাহাকে অন্তরঙ্গরূপে সংযুক্ত করিয়া তাহাকে স্বভাবের নিয়মে পালন করিয়া তোলা; বাহিরে আপাতত তাহার দীনবেশ, তাহার কৃশতা দেখিয়া ধৈর্য্যভ্রষ্ট না হইয়া আশার সহিত, আনন্দের সহিত হৃদয়ের সমস্ত প্রীতি দিয়া, জীবনের সমস্ত শক্তি দিয়া তাহাকে সতেজ ও সফল করা।

 উপস্থিত ক্ষেত্রে ইহাই আমাদের একমাত্র আলোচ্য, একমাত্র কর্ত্তব্য। উহাকে যদি দুরাশা বল, তবে কি পরের রুদ্ধদ্বারে জোড়হস্তে বসিয়া থাকাই আশা পূর্ণ হইবার একমাত্র সহজ প্রণালী? কবে কন্সার্ভেটিব্ গবর্মেণ্ট্ গিয়া লিবারেল্ গবমেণ্টের অভ্যুদয় হইবে, ইহারই অপেক্ষা করিয়া শুষ্কচক্ষু বিস্তারপূর্ব্বক নিদাঘমধ্যাহ্ণের আকাশে তাকাইয়া থাকাই কি হতবুদ্ধি হতভাগ্যের একমাত্র সদুপায়?