পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অবস্থা ও ব্যবস্থা।
১২৭

খাইয়া যায়, তবেই অন্যের পক্ষে বাঁচোয়া, যে অংশে লেশমাত্র খাপ্ না খাইবে, সে অংশে দয়ামায়া-বাচবিচার নাই। হাতের কাছে ইহার বে দুইএকটা প্রমাণ আছে, তাহারই উল্লেখ করিতেছি।

 বাঙালি যে একদিন এমন জাহাজ তৈরি করিতে পারিত, যাহা দেখিয়া ইংরেজ ঈর্ষা অনুভব করিয়াছে, আজ বাঙালির ছেলে তাহা স্বপ্নেও জানে না। ইংরেজ যে কেমন করিয়া এই জাহাজনির্মাণের বিদ্যা বিশেষ চেষ্টায় বাংলাদেশ হইতে বিলুপ্ত করিয়া দিয়াছে, তাহা শ্রীযুক্ত সখারাম গণেশ দেউস্কর মহাশয়ের “দেশের কথা” নামক বইখানি পড়িলে সকলে জানিতে পারিবেন। একটা জাতিকে, যে-কোনো দিকেই হৌক্, একেবারে অক্ষম পঙ্গু করিয়া দিতে এই সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতাবাদী কোনো সঙ্কোচ অনুভব করে নাই।

 ইংরেজ আজ সমস্ত ভারতবর্ষকে বলপূর্ব্বক নিরস্ত্র করিয়া দিয়াছে, অথচ ইহার নিদারুণতা তাহারা অন্তরের মধ্যে একবার অনুভব করে নাই। ভারতবর্ষ একটি ছোট দেশ নহে, একটি মহাদেশবিশেষ। এই বৃহৎ দেশের সমস্ত অধিবাসীকে চিরদিনের জন্য পুরুষানুক্রমে অস্ত্রধারণে অনভ্যস্ত, আত্মরক্ষায় অসমর্থ করিয়া তোলা যে কত-বড় অধর্ম্ম, যাহারা এককালে মৃত্যুভয়হীন বীরজাতি ছিল, তাহাদিগকে সামান্য একটা হিংস্রপশুর নিকট শঙ্কিত নিরুপায় করিয়া রাখা যে কিরূপ বীভৎস অন্যায়, সে চিন্তা ইহাদিগকে কিছুমাত্র পীড়া দেয় না। এখানে ধর্ম্মের দোহাই একেবারেই নিষ্ফল—কারণ জগতে অ্যাংলোস্যাক্মন্ জাতির মাহাত্ম্যকে বিস্তৃত ও সুরক্ষিত করাই ইহারা চরম ধর্ম্ম জানে, সেজন্য ভারতবাসীকে যদি অস্ত্রত্যাগ করিয়া এই পৃথিবীতলে চিরদিনের মত নির্জ্জীব নিঃসহায় পৌরুষরিহীন হইতে হয়, তবে সে পক্ষে তাহাদের কোনো দয়ামায়া নাই।

 অ্যাংলোস্যাক্সন্ যে শক্তিকে সকলের চেয়ে পূজা করে, ভারতবর্ষ