পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অবস্থা ও ব্যবস্থা।
১২৯

নহে। একটি দূরবর্ত্তী সমগ্র জাতির কর্ত্তৃত্বভার আমাদিগকে বহণ করিতে হইতেছে। ভিক্ষাবৃত্তির পক্ষে এই অবস্থাটাই কি এত অনুকূল? প্রবাদ আছে যে, ভাগের মা গঙ্গা পায় না, ভাগের কুপোষ্যই কি মাছের মুড়া এবং দুধের সর পায়?

 অবিশ্বাস করিবার একটা শক্তি মানুষের পক্ষে অবশ্য প্রয়োজনীয়। ইহা কেবল একটা নেতিভাবক গুণ নহে, ইহা কর্ত্তৃভাবক। মনুষ্যত্বকে রক্ষা করিতে হইলে এই অবিশ্বাসের ক্ষমতাকে নিজের শক্তির দ্বারা খাড়া করিয়া রাখিতে হয়। যিনি বিজ্ঞানচর্চ্চায় প্রবৃত্ত, তাঁহাকে অনেক জনশ্রুতি, অনেক প্রমাণহীন প্রচলিত ধারণাকে অবিশ্বাসের জোরে খেদাইয়া রাখিতে হয়, নহিলে তাঁহার বিজ্ঞান পণ্ড হইয়া যায়। যিনি কর্ম্ম করিতে চান, অবিশ্বাসের নিড়ানির দ্বারা তাঁহাকে কর্ম্মক্ষেত্র নিষ্কণ্টক রাখিতে হয়। এই যে অবিশ্বাস, ইহা অন্যের উপরে অবজ্ঞা বা ঈর্ষাবশত নহে, নিজের বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি নিজের কর্ত্তব্যসাধনার প্রতি সম্মানবশত!

 আমাদের দেশে ইংরেজ-রাজনীতিতে অবিশ্বাস যে কিরূপ প্রবল সতর্কতার সঙ্গে কাজ করিতেছে এবং সেই অবিশ্বাস যে কিরূপ নির্ম্মমভাবে আপনার লক্ষ্যসাধন করিতেছে, তাহা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। উচ্চ ধর্ম্মনীতির নহে, কিন্তু সাধারণ রাজনীতির দিক্ দিয়া দেখিলে এই কঠিন অটল অবিশ্বাসের জন্য ইংরেজকে দোষ দেওয়া যায় না। ঐক্যের যে কি শক্তি, কি মাহাত্ম্য, তাহা ইংরেজ আমাদের চেয়ে ভাল করিয়াই জানে। ইংরেজ জানে, ঐক্যের অনুভূতির মধ্যে কেবল একটা শক্তিমাত্র নহে, পরন্তু এমন একটা আনন্দ আছে যে, সেই অনুভূতির আবেগে মানুষ সমস্ত দুঃখ ও ক্ষতি তুচ্ছ করিয়া অসাধ্যসাধনে প্রবৃত্ত হয়। ইংরেজ আমাদের চেয়ে ভাল করিয়াই জানে যে, ক্ষমতা-অনুভূতির স্ফূর্ত্তি মানুষকে কিরূপ একটা প্রেরণা দান করে। উচ্চ অধি-