পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অবস্থা ও ব্যস্থা।
১৩৯

হও এবং সেই আকাঙ্ক্ষার তৃপ্তির জন্য সকলের মনে একই উদ্যম জন্মিয়াছে, ইহার দ্বারাই সার্থকতা লাভ কর!

 অতএব এখন কিছুদিনের জন্য কেবলমাত্র একটা হৃদয়ের আন্দোলন ভোগ করিয়া এই শুভ সুযোগকে নষ্ট করিয়া ফেলিলে চলিবে না। আপনাকে সংবরণ করিয়া, সংযত করিয়া এই আবেগকে নিত্য করিতে হইবে। আমাদের যে ঐক্যকে একটা আঘাতের সাহায্যে দেশের আদ্যন্তমধ্যে আমরা একসঙ্গে সকলে অনুভব করিয়াছি,—আমরা হিন্দুমুসলমান, ধনি-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, স্ত্রীলোক ও পুরুষ সকলেই বাঙালী বলিয়া যে এক বাংলার বেদনা অনুভব করিতে পারিয়াছি, আঘাতের কারণ দূর হইলেই বা বিস্তৃত হইলেই সেই ঐক্যের চেতনা যদি দূর হইয়া যায়, তবে আমাদের মত দুর্ভাগা আর কেহ নাই। এখন হইতে আমাদের ঐক্যকে নানা উপলক্ষ্যে নানা আকারে স্বীকার ও সম্মান করিতে হইবে। এখন হইতে আমরা হিন্দু ও মুসলমান, সহরবাসী ও পল্লিবাসী, পূর্ব্ব ও পশ্চিম, পরস্পরের দৃঢ়বদ্ধ করতলের বন্ধন প্রতিক্ষণে অনুভব করিতে থাকিব। বিচ্ছেদে প্রেমকে ঘনিষ্ঠ করে, বিচ্ছেদের ব্যবধানের মধ্য দিয়া যে প্রবল মিলন সঙ্ঘটিত হইতে থাকে, তাহা সচেষ্ট, জাগ্রত, বৈদ্যুতশক্তিতে পরিপূর্ণ। ঈশ্বরের ইচ্ছায় যদি আমাদের বঙ্গভূমি রাজকীয় ব্যবস্থায় বিচ্ছিন্নই হয়, তবে সেই রিচ্ছেদবেদনার উত্তেজনায় আমাদিগকে সামাজিক সদ্ভাবে আরো দৃঢ়রূপে মিলিত হইতে হইবে, আমাদিগকে নিজের চেষ্টায় ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে, সেই চেষ্টার উদ্রেকই আমাদের পরম লাভ।

 কিন্তু অনির্দ্দিষ্টভাবে, সাধারণভাবে এ কথা বলিলে চলিবে না। মিলন কেমন করিয়া ঘটিতে পারে? একত্রে মিলিয়া কাজ করিলেই মিলন ঘটে, তাহা ছাড়া যথার্থ মিলনের আর কোনো উপায় নাই।

 দেশের কার্য্য বলিতে আর ভুল বুঝিলে চলিবে না—এখন সে দিন