পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
আত্মশক্তি।

নাই,—আমি যাহা বলিতেছি, তাহার অর্থ এই, সাধ্যমত নিজেদের অভাবমোচন করা, নিজেদের কর্ত্তব্য নিজে সাধন করা।

 এই অভিপ্রায়টি মনে রাখিয়া দেশের কর্ম্মশক্তিকে একটি বিশেষ কর্ত্তৃসভার মধ্যে বদ্ধ করিতে হইবে। অন্তত একজন হিন্দু ও একজন মুসলমানকে আমরা এই সভার অধিনায়ক করিব— তাঁহাদের নিকটে নিজেকে সম্পূর্ণ অধীন, সম্পূর্ণ নত করিয়া রাখিব—তাঁহাদিগকে কর দান করিব, তাঁহাদের আদেশ পালন করিব, নির্ব্বিচারে তাঁহাদের শাসন মানিয়া চলিব—তাঁহাদিগকে সম্মান করিয়া আমাদের দেশকে সম্মানিত করিব।

 আমি জানি, আমার এই প্রস্তাবকে আমাদের বিবেচক ব্যক্তিগণ অসম্ভব বলিয়া উড়াইয়া দিবেন। যাহা নিতান্তই সহজ, যাহাতে দুঃখ নাই, ত্যাগ নাই, অথচ আড়ম্বর আছে, উদ্দীপনা আছে, তাহা ছাড়া আর কিছুকেই আমাদের স্বাদেশিকগণ সাধ্য বলিয়া গণ্যই করেন না। কিন্তু সম্প্রতি নাকি বাংলার একটা দেশব্যাপী ক্ষোভ জন্মিয়াছে, সেই জন্যই আমি বিরক্তি ও বিদ্রূপ উদ্রেকের আশঙ্কা পরিত্যাগ করিয়া আমার প্রস্তাবটি সকলের সম্মুখে উপস্থিত করিতেছি এবং আশ্বস্ত করিবার জন্য একটা ঐতিহাসিক নজিরও এখানে উদ্ধৃত করিতেছি। আমি যে বিবরণটি পাঠ করিতে উদ্যত হইয়াছি, তাহা রুশীর গবর্মেণ্টের অধীনস্থ বাহ্লীক প্রদেশীয়। ইহা কিছুকাল পূর্ব্বে ষ্টেট্‌স্‌ম্যান্‌পত্রে প্রকাশিত হইয়াছিল। সেই বাহ্লীক প্রদেশে জর্জ্জীয় আর্ম্মাণিগণ যে চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইয়াছে, তাহা যে কেন আমাদের পক্ষে দৃষ্টান্তস্বরূপ হইবে না, তাহা জানি না! সেখানে “সকার্‌ট্‌ভেলিষ্টি” নামধারী একটি জর্জ্জীয় “ন্যাশনালিষ্ট” সম্প্রদায় গঠিত হইয়াছে—ইঁহারা “কার্স্‌” প্রদেশে প্রত্যেক গ্রাম্যজিলায় স্বদেশীয় বিচারকদের দ্বারা গোপনবিচারশালা স্থাপম করিয়া রাজকীয় বিচারালয়কে নিষ্প্রভ করিয়া দিয়াছেন।