পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
আত্মশক্তি।

গ্রামের বলস্বরূপ ছিল, সেই পঞ্চায়েৎই গ্রামের দুর্ব্বলতার কারণ হইবে। ভারতবর্ষের যে সকল গ্রামে এখনো গ্রাম্য পঞ্চায়েতের প্রভাব বর্ত্তমান আছে—যে পঞ্চায়েৎ কালক্রমে শিক্ষার বিস্তার ও অবস্থার পরিবর্ত্তন অনুসারে স্বভাবতই স্বাদেশিক পঞ্চায়েতে পরিণত হইতে পারিত-যে গ্রাম্য পঞ্চায়েৎগণ একদিন স্বদেশের সাধারণকার্য্যে পরস্পরের মধ্যে যোগ বাঁধিয়া দাঁড়াইবে এমন আশা করা যাইত, সেই সকল গ্রামের পঞ্চায়েৎগণের মধ্যে একবার যদি গবুর্মেণ্টের বেনো-জল প্রবেশ করে, তবে পঞ্চায়েতের পঞ্চায়তত্ব চিরদিনের মত ঘুচিল। দেশের জিনিষ হইয়া তাহারা যে কাজ করিত, গবর্মেণ্টের জিনিষ হইয়া সম্পূর্ণ উল্টারকম কাজ করিবে।

 ইহা হইতে আমাদিগকে বুঝিতে হইবে, দেশের হাত হইতে আমরা যে ক্ষমতা পাই, তাহার প্রকৃতি একরকম, আর পরের হাত হইতে যাহা পাই, তাহার প্রকৃতি সম্পূর্ণ অন্যরকম হইবেই। কারণ, মূল্য না দিয়া কোনো জিনিষ আমরা পাইতেই পারি না। সুতরাং দেশের কাছ হইতে আমরা যাহা পাইব, সেজন্য দেশের কাছেই আপনাকে বিকাইতে হইবে —পরের কাছ হইতে যাহা পাইব, সেজন্য পরের কাছ না বিকাইয়া উপায় নাই। এইরূপ বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ যদি পরের কাছে মাগিয়া লইতে হয়, তবে শিক্ষাকে পরের গোলামি করিতেই হইবে—যাহা স্বাভাবিক, তাহার জন্য আমরা বৃথা চীৎকার করিয়া মরি কেন?

 দৃষ্টান্তস্বরূপ আর একটা কথা বলি। মহাজনেরা চাষীদের অধিক সুদে কর্জ্জ দিয়া তাহাদের সর্ব্বনাশ করিতেছে, আমরা প্রার্থনা ছাড়া অন্য উপায় জানি না—অতএব গবর্মেণ্টকেই অথবা বিদেশী মহাজনদিগকে যদি আমরা বলি যে, তোমরা অল্পসুদে আমাদের গ্রামে গ্রামে কৃষিব্যাঙ্ক স্থাপন কর, তবে নিজে খর্দ্দের ডাকিয়া আনিয়া আমাদের