পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অবস্থা ও ব্যবস্থা।
১৪৯

এই সাধনা—ইহা যখন আমাদের সিদ্ধ হইবে, তখন আমরা সর্ব্বপ্রকার কর্ত্তৃত্বের যথার্থরূপে যোগ্য হইব। ইহাও নিশ্চিত, যথার্থ যোগ্যতাকে পৃথিবীতে কোন শক্তিই প্রতিরোধ করিতে পারে না। আমরা যখন কর্ত্তৃত্বের ক্ষমতা লাভ করিব, তখন আমরা দাসত্ব করিব— তা আমাদের প্রভু যত বড়ই প্রবল হউন্‌। জল যখন জমিয়া কঠিন হয়, তখন সে লোহার পাইপকেও ফাটাইয়া ফেলে। আজ আমরা জলের মত তরল আছি, যন্ত্রীর ইচ্ছামত যন্ত্রের তাড়নায় লোহার কলের মধ্যে শতশত শাখাপ্রশাখায় ধাবিত হইতেছি—জমাট বাঁধিবার শক্তি জন্মিলেই লোহার বাঁধনকে হার মানিতেই হইবে।

 আমাদের নিজের দিকে যদি সম্পূর্ণ ফিরিয়া দাঁড়াইতে পারি, তবে নৈরাশ্যের লেশমাত্র কারণ দেখি না। বাহিরের কিছুতে আমাদিগকে বিচ্ছিন্ন করিবে, এ কথা আমরা কোনোমতেই স্বীকার করিব না। কৃত্রিম বিচ্ছেদ যখন মাঝখানে আসিয়া দাঁড়াইবে, তখনই আমরা সচেতনভাবে অনুভব করিব যে, বাংলার পূর্ব্বপশ্চিমকে চিরকাল একই জাহ্ণবী তাঁহার বহু বাহুপাশে বাঁধিয়াছেন, একই ব্রহ্মপুত্র তাঁহার প্রসারিত আলিঙ্গনে গ্রহণ করিয়াছেন, এই পূর্ব্বপশ্চিম, হৃৎপিণ্ডের দক্ষিণবাম অংশের ন্যায়, একই পুরাতন রক্তস্রোতে সমস্ত বঙ্গদেশের শিরাউপশিরায় প্রাণবিধান করিয়া আসিয়াছে; এই পূর্ব্বপশ্চিম, জননীর বামদক্ষিণ স্তনের ন্যায়, চিরদিন বাঙালির সন্তানকে পালন করিয়াছে। আমাদের কিছুতেই পৃথক্ করিতে পারে, এ ভয় যদি আমাদের জন্মে, তবে সে ভয়ের কারণ নিশ্চয়ই আমাদেরই মধ্যে আছে এবং তাহার প্রতিকার আমাদের নিজের চেষ্টা ছাড়া আর কোন কৃত্রিম উপায়ের দ্বারা হইতে পারে না। কর্ত্তৃপক্ষ আমাদের একটা কিছু করিলেন বা না করিলেন বলিয়াই অম্‌নি যদি আমাদের সকলদিকে সর্ব্বনাশ হইয়া গেল বলিয়া আশঙ্কা করি, তবে কোন কৌশললব্ধ সুযোগে, কোন প্রার্থনা