পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
আত্মশক্তি।

শক্তিকে অবলম্বন করিবার জন্য একট। মর্ম্মভেদী আহ্বান উঠিয়াছে।

 এই আহ্বানে পুরুষেরা কে কি ভাবে সাড়া দিবেন, তাহা জানি না—কিন্তু আমাদের অন্তঃপুরেও কি এই আহ্বান প্রবেশ করে নাই? আমরা কি আমাদের মাতৃভূমির কন্যা নহি? দেশের অপমান কি আমাদের অপমান নহে? দেশের দুঃখ কি আমাদের গৃহপ্রাচীরের পাষাণ ভেদ করিতে পারিবে না?

 ভগিনীগণ, আপনারা হয় ত কেহ কেহ জিজ্ঞাসা করিবেন, আমরা স্ত্রীলোক, আমরা কি করিতে পারি—দুঃখের দিনে নীরবে অশ্রুবর্ষণ করাই আমাদের সম্বল।

 এ কথা, আমি স্বীকার করিতে পারিব না। আমরা যে কি না করিতেছি, তাই দেখুন! আমরা পরণের শাড়ী কিনিতেছি বিলাত হইতে, আমাদের অনেকের ভূষণ জোগাইতেছে হ্যামিল্টন্‌, আমাদের গৃহসজ্জা বিলাতী দোকানের, আমরা শয়নে-স্বপনে বিলাতের দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া আছি। আমরা প্রতিদিন আমাদের জননীর অল্প কাড়িয়া তাঁহার ভূষণ ছিনাইয়া বিলাতদেবতার পায়ে রাশিরাশি অর্ঘ্য যোগাইতেছি।

 আমরা লড়াই করিতেও যাইব না, আমরা ভিক্ষা করিতেও ফিরিব না, কিন্তু আমরা কি এ কথাও বলিতে পারিব না যে, না, আর নয়; আমাদের এই অপমানিত উপবাসক্লিষ্ট মাতৃভূমির অন্নের গ্রাস বিদেশের পাতে তুলিয়া-দিয়া তাহার পরিবর্ত্তে আমাদের বেশভূষার, সখ্ মিটাইব না? আমরা, ভাল হউক্, মন্দ হউক্, দেশের কাপড় পরিব, দেশের জিনিষ ব্যবহার করিব।

 ভগিনীগণ, সৌন্দর্য্যচর্চ্চার দোহাই দিবেন না! সৌন্দর্য্যবোধ অতি উত্তম পদার্থ, কিন্তু তাহার চেয়েও উচ্চজিনিষ আছে। আমি এ কথা স্বীকার করিব না যে, দেশী জিনিষে আমাদের সৌন্দয্যবোধ ক্লিষ্ট